স্লোগান-ফেস্টুন-দেওয়াল লিখনে প্রচার তো আছেই, তার সঙ্গে ২০১৯ এর লোকসভা ভোটে সংযোজন ঘটেছে ঘুড়ি ও শাড়ির। পেটকাটি, চাঁদিয়াল, মোমবাতি, বগ্গা নয়। রাজনৈতিক দলের রঙে তৈরি হচ্ছে ঘুড়ি। যাদের নামকরণও হয়েছে দলের নামে। এই একই দৃশ্য দেখা গেছে শাড়ির ক্ষেত্রেও। চান্দেরি, সিল্ক, বা তাঁত ছেড়ে রাজনৈতিক দলের নাম উচ্চারণ করলেই দোকানে মিলছে দলীয় রংয়ের শাড়ি। দোকানদাররা জানান, "এটা শুধুমাত্র মরশুম বা ট্রেন্ড মেনে তৈরি, এই নয়া ভাবধারায় একেবারেই হাত নেই কোনো রাজনৈতিক দলের।"
সন্তোষ মিত্র স্কোয়ারের লাগোয়া গলিতে কলকাতার অত্যন্ত জনপ্রিয় ঘুড়ি নির্মাতা অজিত দত্তের দোকান। সকাল সন্ধে ভোটের আমেজে মজে রয়েছেন অজিতবাবু। ভোট যুদ্ধের আবহ স্পষ্ট সেখানে। কিন্তু কোন দলের প্রতি তাঁর ঝোঁক রয়েছে তা বোঝা মুশকিল। কারণ গোটা দোকান জুড়ে রাখা রয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম ও কংগ্রেসের পতাকা। রাতদিন কড়া পড়ে যাওয়া হাতে একের পর এক তৈরি করে চলেছেন তৃণমূলের জোড়াফুল, সিপিএমের কাস্তে হাতুড়ি, বিজেপির পদ্ম ও কংগ্রেসের হাত চিহ্ন যুক্ত রাজনৈতিক দলের পতাকা।
আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2019: ‘এই তৃণমূল আর না’, বাবুলের রিংটোনের জেরে শোকজ ইসি-র
আজ ৪০-৪৫ বছর ধরে ঘুড়ি বানাচ্ছেন অজিতবাবু। তার মধ্যে বছর কুড়ি ধরে রাজনৈতিক দলের ঘুড়ি বানিয়ে আসছেন। যার দাম শুরু ৫ টাকা থেকে। তবে একসঙ্গে অনেক কিনলে মিলতে পারে ছাড়। কেমন বিক্রি হচ্ছে এই ঘুড়ি? একগুচ্ছ কাঠি নিয়ে ঘুড়ি বানাতে ব্যস্ত বছর পঁয়ষট্টির মানুষটি বলে ওঠেন, "তেমন খুব একটা নয়। তার ওপর এখন ঘুড়ি ওড়ানোর সময় নয়। ভোটের সময় আরও এগিয়ে এলে বিক্রি বাড়তে পারে।" অজিতবাবু আরও বলেন, "মাঞ্জা দেওয়া শুরু হয়ে গেছে, আকাশেও উড়বে রাজনৈতিক দলের ঝান্ডা। ঘুড়ি উড়লে যেমন প্রচার হবে, ভো-কাট্টা হয়ে যেখানে পড়বে সেখানেও হবে প্রচার।"
ধর্মতলার হগ মার্কেটের জি-২১ নং দোকান। নাম মনসা শাড়ি। ৩৩ বছরের নবীন ঈশ্রান ও তাঁর ভাই মিলে চালান এই দোকান। একজন ডিজাইন ভাবেন, অন্যজন তা বাস্তবায়িত করে। নবীন জানান, প্রত্যেক মরশুমকে শাড়িতে ফুটিয়ে তুলতে চান তাঁরা। এদেশে 'ভোট পুজো' যেহেতু কোনো বড় উৎসবের চেয়ে কম নয়, সেহেতু, যবে থেকে ভোটের দিনক্ষণ প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন, সেদিন থেকেই দলের প্রতীক ও রং সম্বলিত শাড়ি বিক্রি করা শুরু হয়েছে।
এখনও অবধি বিক্রি হয়েছে গোটা কুড়ি শাড়ি। তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র লোকসভা ভোটেই এই ধরণের শাড়ি তৈরি করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দলের অনুগামীদের দৌলতে জোড়াফুল প্রিন্টের শাড়িই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। তাঁর আরও বক্তব্য, "পরিচিতির অভাবে গত বছর বিক্রির হার ভালো ছিল না। তবে ভোটের মুখে প্রচারের কারণে বিক্রি বাড়তে পারে বলে আশা করছি।"
আরও পড়ুন: Lok Sabha Election 2019: ১১ আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষিত, কে লড়ছেন কোথায়?
নবীন বলেন, "সাধারণত যে কোনো উৎসবের সময়কাল থাকে খুব কম, যে কারণে মরশুমের ট্রেন্ড মেনে শাড়ি তৈরি করলে কিছুদিন পর তা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের রঙের শাড়ির ক্ষেত্রে এমনটা হবে না বলে আমার ধারণা। শুধুই দলের লোক নয়, সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যেও চাহিদা রয়েছে।"
তবে তিনি উল্লেখ করেন, "রাজনৈতিক দলের লোকজনের নজর পড়েছে এই শাড়ির দিকে। প্রত্যেক দলের তিন রকমের শাড়ি রয়েছে, চান্দেরি, আর্ট সিল্ক, ক্রেপ। প্রত্যেক দলের শাড়ির দাম ৯০০ থেকে ১,২০০ টাকা। আমরা আশা করছি, ভোট এগিয়ে এলে এই শাড়ির প্রতি দলের লোকজন আরও আগ্রহ দেখাবেন। শাড়ির নকশার মধ্যে ফ্যাশন আর প্যাশনকেই মিশিয়ে দিতে চেয়েছি।"
দেওয়াল লিখন, পোস্টার ছেড়ে আদৌ কি বাজিমাত করতে পারবে এই ধরনের প্রচার? এই পদ্ধতিকে কতটা কাছে টানবে রাজনৈতিক দলগুলি? সবটাই জানা যাবে আগামীদিনে। ভোটারদের মনে রেখাপাত করতে সাধারণত আমরা দেখে থাকি রাজনৈতিক মতবাদ প্রতিফলিত হয়ে থাকে স্লোগান-ফোস্টুন-দেওয়াল লিখনে।
তবে এবার যে প্রচার হাওয়ার বদল ঘটতে পারে তার আভাস ইতিমধ্যে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা আসানসোলের সাংসদ তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। প্রতিপক্ষ তৃণমূলকে বিঁধতে রিংটোন-এর আশ্রয় নিয়েছেন, যার ফলে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়েও পড়েছেন তিনি।