কলকাতার বুকে যে কয়টি জাগ্রত কালীমন্দির রয়েছে, তার অন্যতম নানেদের কালী মন্দির। উত্তর কলকাতায় হেদুয়া পার্কের কাছে এই মন্দির। ঠিকানা ২৫, বেথুন রো, হেদুয়া। দক্ষিণমুখী এই মন্দির ১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ঈশ্বরচন্দ্র নান। বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয় রথযাত্রার দিন। এই মন্দির ও বিগ্রহ স্থাপনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এক ইতিহাস।
কথিত আছে, কৃষ্ণচন্দ্র সিংহ নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বারাণসী থেকে কষ্টিপাথরের বিগ্রহ তৈরি করে আনেন। কিন্তু, দেবী যেন চেয়েছিলেন, তিনি ঈশ্বরচন্দ্র নানের মন্দিরেই প্রতিষ্ঠিত হবেন। কৃষ্ণচন্দ্র নানা কারণে আর তাই দেবীকে প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত তিনি ঈশ্বরচন্দ্র নানের হাতে বিগ্রহকে স্থাপনের ভার সঁপে দেন। এরপরই মন্দির তৈরি করে বিগ্রহটি স্থাপন করেন ঈশ্বরচন্দ্র নান। মন্দিরের সামনের দু'পাশে আটচালা দুটি শিব মন্দিরে আছে দুটি কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গও। এই মন্দিরে দেবী নিস্তারিণীর পাশাপাশি শিবলিঙ্গেরও নিত্যপুজো হয়। এছাড়া প্রতি অমাবস্যায় দেবীর পুজো ও হোমের আয়োজন থাকে।
আরও পড়ুন- গণেশের জন্মকাহিনি, কী বলছে কোন পুরাণ, চলুন জেনে নিই
শ্যামাপূজার দিন বিশেষ পূজা তো হয়ই। মন্দিরের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতেও আয়োজিত হয় বিশেষ পুজো। দেবী শাক্ত হলেও পুজো হয় বৈষ্ণব মতে। তাই এই মন্দিরে পশুবলি বন্ধ। মন্দিরে রয়েছে নারায়ণের ঘর এবং দুর্গা দালান। কালী মন্দির প্রতিষ্ঠার আগে থেকে নান পরিবার পালা করে দুর্গাপূজা করত। এখনও সেই রীতি বহাল আছে। বাড়ির দুর্গা দালানে আয়োজিত হয় দুর্গাপুজো। নিস্তারিনি মন্দির খোলা থাকে সকাল ৭টা থেকে ১০টা ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।
শোনা যায়, এই মন্দিরে বিভিন্ন সময় বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এসেছেন। দেবীর আশীর্বাদে তাঁরা ধন্য হয়েছেন। কালীমন্দিরটি বেদির ওপর তৈরি। এর গর্ভগৃহের সামনে ভক্তদের দাঁড়ানোর জন্য অন্যান্য বড় মন্দিরের মতই অলিন্দ আছে। কবে এই মন্দির তৈরি হয়েছে, তার উল্লেখ রয়েছে মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলকে। বেশ বড় চত্বরজুড়ে এই মন্দির। ভক্তদের জন্য নিস্তারিণি মন্দিরের সামনের বোর্ডে লেখা আছে মন্দির খোলা থাকার সময়সূচিও।