যেভাবে খুশি চোখ বেঁধে দিন। যে কোনও অঙ্কের টাকার নোট দিন হাতে। শুধু কত টাকার নোট বলেই ক্ষান্ত থাকবে না সে। জিজ্ঞেস করুন নোটের সিরিয়াল নম্বর। গড়গড় করে বলে দেবে। এতেও শেষ নয়। সাধারণ পেন্সিল বা রং পেন্সিল হাতে দিয়ে দেখুন। রীতিমত ছবি এঁকে মানানসই রং করে দেবে। সাইকেল চালাবে বাড়ির সামনের রাস্তায়। এবং সবটাই শক্ত করে চোখ বাঁধা অবস্থায়।
নাম দীপ্তদীপ শীল ওরফে বুকন, বয়স ১০ বছর, বাড়ি কাঁচরাপাড়া। কল্য়ানী ইউনিভার্সিটি এক্সপেরিমন্টাল হাইস্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। নাম শোনেন নি, নিশ্চিতভাবেই। কিন্তু আপাতত এটুকু জানলেই চলবে যে চোখ খোলা রেখে আপনি যা পারেন না, চোখ বন্ধ করে বুকন তা পারে। কীভাবে? এর উত্তর হলো ক্রমাগত অভ্য়াসের ফলে অতীব মাত্রায় প্রখর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়, বা সিক্সথ সেন্স। তারই প্রভাবে নানারকম চমকপ্রদ কান্ডকারখানা করতে পারে বুকন। এর মধ্যে কিন্তু কোন ম্যাজিক বা বুজরুকি নেই। রয়েছে নিয়মিত অধ্য়বসায় এবং একনিষ্ঠ সাধনা। আমাদের পাঁচ ইন্দ্রিয়, অর্থাৎ মুখ, চোখ, কান, নাক, ত্বক, বাদেও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কতটা সক্রিয় হতো পারে তা আজ দীপ্তদীপের কাজকর্মে স্পষ্ট।
সুপার ব্রেইন অ্য়াকাডেমিতে পাঁচ বছর আগে ছ'মাসের প্রশিক্ষণ নেয় দীপ্ত। সেই শুরু। আজ সে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তার জন্য প্রচুর সময় ব্যয় করতে হয়েছে তাকে নিঃসন্দেহে। তবে তার পড়াশোনায় কোনও ব্য়াঘাত হয় না বলেই তার দাবি। উৎসাহ জোগাতে সবসময় তার পাশে রয়েছেন বাবা, মা, এবং রয়েছে দিদি। চোখ বন্ধ করে সাইকেল চালানো অভ্য়াস করার জন্য় সাইকেলও কিনে দিয়েছেন বাবা ইন্দ্রজিৎ শীল।
দীপ্তদীপের নিজের কথায়, "পাঁচ বছর আগেই এসব শিখেছিলাম। যেখানে শিখতাম সেই কেন্দ্রটিও উঠে গিয়েছে। কিন্তু আমি নিয়মিত অভ্য়াস করে চলেছি।" কিন্তু এই অভ্যাসের উদ্দেশ্য় কী? বুকনের স্পষ্ট জবাব, "আমার ভাল লাগে তাই করছি। এতে একটা মজা আছে। এটা করার সময় মনে পড়ে যায় কানামাছি ভো ভো খেলা। আমাকে তো ওই খেলায় কেউ নিতেই চাইত না।" দীপ্তর আরও বক্তব্য়, "এতে আমার পড়াশোনায় কোনও অসুবিধে হয় না। আবার যোগাসন আর অন্য়ান্য় অভ্য়াসও করি নিয়মিত। তাতে অামার কোনও অসুবিধে হয় না।" কিন্তু এখন যাই বলুক, খুব সহজ হয়নি বুকনের এই পথ চলা। খাওয়াদাওয়ায় রয়েছে বিস্তর বাধানিষেধ। ঠান্ডা পানীয়, চিপস, এমন নানা ধরনের খাবার তার খাদ্য় তালিকায় নেই। যেসব খাবার একসময় তার খুব প্রিয় ছিল।
এইভাবে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়তে শান দেওয়ার কথা মাথায় এল কীভাবে? কী বলছেন বুকনের বাবা? "একটা সংস্থা নানা দিকে পোস্টার দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি ছেলের ছবি দেওয়া। সংস্থার নাম ছিল সুপার ব্রেইন অ্য়াকাডেমি। সেখানে যোগাযোগ করি। ছেলে কয়েক মাসের ট্রেনিং নিয়েছিল। প্রথম দিনই ওঁরা বলে দিয়েছিলেন দীপ্তদীপ এই ট্রেনিং নিতে পারবে। এখন অবশ্য় সেই কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অভ্য়াস ছাড়েনি ছেলে।"
আমরা জানি, সাধারনত চোখ বেঁধে খেলা দেখান ম্য়াজিশিয়ানরাই। অনেকে আবার অলৌকিক বলেও চালান এসব কীর্তিকলাপকে। তাছাড়া আরও নানা বুজরুকি তো আছেই। সেসব ক্ষেত্রে অবশ্যই কৌশলের ব্য়াপার থাকে। ইন্দ্রজিতবাবু বলেন, "এটা কোনও অলৌকিক ব্য়াপারই নয়। নানা ধরনের কঠোর অভ্য়াসের নিয়ন্ত্রণে থাকতে হয় ওকে। শুধু খাবারের বিধিনিষেধ নয়। এছাড়া নানা ধরনের নিয়ম আছে। তার মধ্য়ে রয়েছে সকালে উঠেই এক গ্লাস জল খাওয়া। এরপর টানা যোগাসন। তারপর প্র্যাক্টিস। তবে স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা, খেলাধুলা, সব কিছুই স্বাভাবিক ভাবে করে বুকন।"
ম্যাজিক নয়, বুজরুকি নয়, কোন ভানুমতীর খেল নয়। স্রেফ মনঃসংযোগ বাড়ানোর খেলা। যার আরেক নাম সিক্সথ সেন্স।