পঞ্জিকা মতে, প্রতিবছর ফাগুন পূর্ণিমা রাতে ন্যাড়া পোড়া হয়। এই বছর দোল পূর্ণিমার আগের রাতে শুক্লা চতুর্দশী ছেড়ে যাওয়ার পর ২১শে ফাল্গুন ১৪২৯, ৬ই মার্চ ২০২৩ তারিখে পালিত হল। ন্য়াড়াপোড়া পাড়ায় পাড়ায় ন্যাড়াপোড়ার দিন খেজুরের ডাল-পাতা, নারকেলের ডাল-পাতা দিয়ে ছাউনির মত করে দোলের আগের রাতে তাতে আগুন জ্বালানো হয়।
অশোক, বট, অশ্বত্থ, আমলা, নিম, আম, কলা ও বেলকাঠ বা পাতা অবশ্য পোড়ানো হয় না। কারণ, তা শাস্ত্রমতে পবিত্র ও পূজনীয়। অর্থাৎ এইসব গাছের কাঠ বা পাতা পুজোর উপকরণে ব্যবহার করা হয়। যা নিয়ে সকলে মেতে ওঠে ‘নেড়া পোড়া’-র আনন্দে। সঙ্গে মুখে মুখে ফেরে ‘আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া - কাল আমাদের দোল। পূর্ণিমাতে চাঁদ উঠেছে বল হরিবোল।' কেউ আবার বলেন 'গৌর হরিবোল'।
ন্যাড়াপোড়াকে অনেকে আবার চাঁচর বা বুড়ির ঘর পোড়ানোও বলেন। তার একটা ব্যাখ্যা অনেকে এইভাবে দেন যে, দোল আমাদের ঋতুচক্রের শেষ উৎসব। এই সময় পড়ে থাকা গাছের শুকনো পাতা, তার ডালপালা একত্রিত করে জ্বালিয়ে দেওয়ার মধ্যে এক সামাজিক তাৎপর্য রয়েছে। পুরনো জঞ্জাল, রুক্ষতা, শুষ্কতা সরিয়ে নতুনের আহ্বান হচ্ছে এই দোল উৎসব। এ হল, বসন্ত শেষে নতুন বছরের গ্রীষ্মকে আগমন জানানো।
তবে, অবাঙালি হিন্দুদের কাছে ন্যাড়াপোড়া স্রেফ কোনও সাধারণ উৎসব নয়। এ হল, ধর্মীয় রীতি মেনে হোলিকা দহন। এবছর যেমন সেই হোলিকা দহনের শুভ সময় শুরু হয়েছিল ৬ মার্চ, বিকেল ৪টা ১৭-য়। যা রয়েছে ৭ মার্চ, সন্ধ্যা ৬টা ৯মিনিট পর্যন্ত। ধর্মীয় রীতি মেনে, হোলির ৮ দিন আগে শুরু হয়েছে হোলাষ্টক।
এবার হোলাষ্টক শুরু হয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার থেকে। প্রচলিত বিশ্বাস, দোলের দিন পুজো-অর্চনা করলে তা গৃহস্থের পক্ষে অত্যন্ত সুখদায়ক। এইদিন পুজো করলে জীবনে সুখ ও সমৃদ্ধি আসে। কথিত আছে, এই বিশেষ দিনেই প্রহ্লাদকে হোলিকার হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন শ্রীবিষ্ণু। তাই এই দিনে বাড়িতে পুজো করলে অশুভ শক্তির বিনাশ হয়, শুভ শক্তির উদয় হয়।
আরও পড়ুন- ‘দোল’ বাঙালির নিজস্ব উৎসব, যেখান থেকে তার সূচনা
আর, কে এই হোলিকা? শাস্ত্রমতে, বিষ্ণুভক্ত প্রহ্লাদের পিতা ছিলেন দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু। তিনি পুত্রের বিষ্ণুভক্তি পছন্দ করতেন না। সেজন্য ছেলে প্রহ্লাদকে হত্যার পর্যন্ত চেষ্টা করেন। দায়িত্ব দেন বোন হোলিকাকে। হিরণ্যকশিপু হোলিকাকে নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রহ্লাদকে নিয়ে আগুনে প্রবেশ করতে। হোলিকার ওপর ব্রহ্মার আশীর্বাদ ছিল যে অগ্নি তাঁকে কখনও স্পর্শ করতে পারবে না। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যায় যে শিশু প্রহ্লাদকে নিয়ে হোলিকা অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করার পর ছাই হয়ে যায়। অথচ, প্রহ্লাদ অক্ষত থাকেন।
হোলিকার মৃত্যুতে প্রহ্লাদ তথা দেবশক্তির বিজয় ধরে নিয়েই পালিত হয় অবাঙালির হোলি উৎসব। সাধারণত দোলের পরের দিন পালিত হয় হোলি। এবছর হোলি পড়েছে ৮ই মার্চ, বাংলায় ২৩ ফাল্গুন। তবে, স্থানভেদে অনেক আগে থেকেই হোলি শুরু হয়ে যায়। যেমন, শ্রীকৃষ্ণের লীলাক্ষেত্র মথুরা ও বৃন্দাবনেই হোলি চলে ১৬ দিন ধরে।