Kolkata Durga Puja: গরানহাটার কুখ্যাত সেই রাস্তা ধরে বেনিয়াটোলার দিকে কিছুটা এগিয়ে এলে বাঁ-হাতি একটা রাস্তা চলে গিয়েছে বি কে পাল পার্কের দিকে, সোনাগাছির পার্শ্ববর্তী অঞ্চল, যেখানে পুজো হয় আহিরীটোলা যুবক বৃন্দর। উত্তর কলকাতার অন্যতম জমজমাটি পুজো এটি। এ বছর তাদের থিম, ‘উৎসারিত আলো, তাঁরাও মায়ের জাত’। এখানে যৌনকর্মীদের জীবনের হাজারো উপেক্ষিত দিককে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মন্ডপের মধ্যে দিয়ে।
মেয়েদের লজ্জাবস্ত্র কাপড়কে প্রতিকী হিসাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা
ইতিমধ্যেই একদফা উদ্বোধন হয়ে গিয়েছে। মন্ডপে ঢোকার সময় রাস্তা জুড়ে যে বিশাল আলপনা চোখে পড়বে তাতে মিশে রয়েছে সোনাগাছির মেয়েদের হাতের ছোঁয়া। জীবন্ত সেই গ্রাফিটিগুলো যেন ওঁদের কথাই বলছে ক্রমাগত, বলছে ওঁদের না পাওয়া গুলোর কথা। মহালয়ার দিন এই আলপনা আঁকার কাজে হাত লাগিয়েছিলেন যৌনকর্মীরা।
মন্ডপে ঢুকেই মাথার ওপরে রয়েছে কিছুটা সাদা অংশ। সোনাগাছি যৌনকর্মীদের নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র চলবে সেখানে। তাঁদের অন্দরের কাহিনী দেখার সুযোগ পাবেন দর্শনার্থীরা। মন্ডপ সজ্জার বেশ কিছু কাজ এখনও বাকি। রঙ-তুলি নিয়ে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছিল দ্বিতীয় দফায় মন্ডপ উদ্বোধন।
রাস্তা জুড়ে গ্রাফিটি
আরও পড়ুন: ধূপধুনোর গন্ধ ঘিঞ্জি গলিপথে, শারদোৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে সোনাগাছিতে
"দুর্গা প্রতিমা তৈরির জন্য আমাদের চৌকাঠের মাটি আমরা দেব না," রাগ আর অভিমানে একপ্রকার গর্জেই উঠেছিলেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সদস্যা কাজল বোস। একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়েও আর পাঁচজনের মতো সমাজে অবাধ বিচরণ নেই তাঁদের, মাথা উঁচু করে বাঁচতে এখনও বেগ পেতে হয় যৌনকর্মীদের। এ কথা যেমন ঠিক, পাশাপাশি যুগের হাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আজ অনেকটাই সাবালক হয়েছে সমাজ।
মন্ডপে ঢোকার মুখে
পতিতাপল্লী আজ আর অতটা পতিত নয়, যতটা আজ থেকে কয়েকবছর আগেও ছিল। আজ ওঁদের সন্তানদের পায়ে ফুটবল কথা বলছে, নারীশক্তি সম্মানের মনোনয়নেও নাম রয়েছে যৌনকর্মীর, যেখানে মন্ডপে ওঁদের ওঠা নিষেধ ছিল একসময়, সেখানে বর্তমানে ২৫০-র বেশী পুজোতে বিচারকের আসনও পেয়েছেন ওঁরা, আইনি পথে নিজেদের পুজোর লড়াইতেও জিতেছেন। সব মিলিয়ে অন্ধকার কেটে গিয়েছে অনেকেটাই। তবু অধিকারটুকু ছিনিয়ে আনতে আজও লড়তে হয় তাঁদের।
মূল মন্ডপ
এই লড়াইতেই সামিল হয়েছে আহিরীটোলা যুবক বৃন্দ। কমিটির সদস্য সুরঞ্জন বসু জানালেন, "গত বছর থেকেই এই থিমের কথা ভেবে রেখেছি আমরা। পাশে পেয়েছি সোনাগাছির যৌনকর্মীদের। ওঁদের সহায়তায় কাজটা অনেক বেশি সহজ হয়ে গিয়েছে।
শিল্পী মানস রায়ের কথায়, "যাঁদের জন্য আপনার আমার বাড়ির মেয়ে বৌ-রা সুরক্ষিত, তাঁরাই কেন সমাজে উপেক্ষিত এখনও বুঝে উঠতে পারিনি, ওদের লড়াই-এ এভাবে সামিল হতে পেরে ভীষণ ভাল লাগছে।"