করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে চিকিৎসকরা ঠিক যতটাই মানুষকে সতর্ক করেছিলেন তার ঠিক উল্টো পুরাণ ওমিক্রন মহামারীর ক্ষেত্রে। এবং এই সময়ে দাঁড়িয়ে প্রচুর মানুষ একেবারেই ঢিলা দিয়েছেন নিজেদের সুস্থতায়। তাদের মতে করোনা অতিমারির দিন শেষ, এবার পুনরায় নিজেদেরকে বাইরের জগতের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা। চিকিৎসকের একদল নিজেও তাই মনে করছেন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফ থেকে এখনও তেমন কোনও সংকেত মেলেনি বরং অশনি সঙ্কেত সাংঘাতিক ভাবে মিলেছে। মানুষের এরূপ আচরণে তারা যেন হতবাক!
চিকিৎসার ভাষা যেমনই হোক, যেকোনও রোগ কিংবা ভাইরাসের শক্তি অথবা তার ক্ষতির সম্ভাবনা বিচার করতে গেলে বিজ্ঞানের দ্বারস্থ হতেই হয়। তারাই নানা পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে জানান, যে এই ভাইরাসটির কতটা শক্তি কিংবা কিভাবে এটি মানুষের ক্ষতি করতে পারে। এটুকু ধারণা আগেই পাওয়া গেছিল যে অন্যান্য ভ্যারিয়েন্ট এর তুলনায় এটির ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, বরং এটির মিউটেশন এতই বেশি যে পরবর্তীতে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ব্যাহত করে এবং তারপরেই তারা দুর্বল অনুভব করতে থাকেন।
এবার জেনে নেওয়া যাক, বিজ্ঞানের পরিভাষা কী বলছে এই প্রসঙ্গে?
প্রথম দিন থেকেই চিন্তার ভাঁজ বিজ্ঞানীদের। তারা যথেষ্ট আশঙ্কা করেছেন যে এমন এক সময় আসবে যে এটির কারণে সংক্রমিত ব্যক্তির সংখ্যা ডেল্টার থেকেও বেড়ে যাবে। বর্তমানে অমিক্রনের নয়া সাব ভ্যারিয়েন্ট BA.2 এর হদিশ মিলেছে কম করে ৪০ টি দেশে। এর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে জানানো হয়েছিল সামনেই নতুন এমন কিছু ভ্যারিয়েন্ট এর আগমন ঘটতে পারে যার কারণে মানুষের জীবনে ছেদ পরতে পারে। যদিও রাজ্য জুরে মৃত্যু কিন্তু বেশ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, এই ভ্যারিয়েন্ট এর সংক্রমণের হার প্রসঙ্গে এপিডেমিওলজিস্ট এবং WHO এর অন্যতম সদস্য মারিয়া ভ্যান কেরখোভ যথেষ্ট চিন্তায়। তিনি জানাচ্ছেন, এই ভাইরাসের মিউটেশন এতই বেশি যে সহজেই মানুষের শরীরের কোষকে আক্রান্ত করতে পারে। ফলেই শরীরে ইমিউন এস্কেপ জাতীয় সমস্যা দেখা যায়। সেই কারণেই টিকা প্রাপ্ত ব্যক্তিরাও সহজেই সংক্রমিত হতে পারে।
বিশেষ করে তিনি আরও জানিয়েছেন, শারীরিক ক্ষতির মধ্যে এটি কন্ঠনালীকে মারাত্মক মাত্রায় ক্ষতি করতে পারে। শ্বাসযন্ত্রের উপরের ভাগে এটি এত বেশি সময় ধরে থাকতে পারে যে রোগটিকে ছড়িয়ে দিতে পারে সাংঘাতিক ভাবে। বিশেষজ্ঞের একদল জানিয়েছেন তারা যেভাবে এর ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি দেখছেন তাতে করে দুই সপ্তাহে কম করে ২০% থেকে ছাড়িয়ে সেটি ৮০% তে পৌঁছে গেছে। আন্তর্জাতিক স্তরে এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়ার ধারাকে সংকটের সম্ভাবনা বলেই স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এর এত মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ার কারণ?
বিজ্ঞানীরা মনে করছে এর মিউটেশন তো বটেই, এবং তার সঙ্গেই ওমিক্রনের জেনেটিক কম্পোজিশন শরীরের প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি হ্রাস করতে পারে। ফলেই সাধারণ ইনফেকশন এবং ভ্যাকসিন দুটি থেকেই কোনও লাভ হয় না। এবং ভাইরাস সংস্পর্শে এসে তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ে। যেহেতু মৃদু উপসর্গের বাহক তাই এর ছড়িয়ে সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশ মারাত্মক।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন