বাংলার সতীপীঠগুলোর অন্যতম মুর্শিদাবাদের কিরীটেশ্বরী মন্দির। কথিত আছে, এখানে দেবী সতীর মুকুটের কণা বা কিরীট পড়েছিল। তাই এই পীঠের নাম কিরীটেশ্বরী। কিন্তু, যেহেতু দেবীর কোনও অঙ্গ পড়েনি, তাই শক্তিসাধকদের অনেকে একে উপপীঠও বলেন। কেউ এই তীর্থস্থানকে ডাকেন কীর্তিশ্বরী বলে। আবার, দেবীর মুকুটের অংশ পড়েছিল বলে অনেকে ডাকেন মুকুটেশ্বরী বা মুক্তেশ্বরী বলে। তবে, যে নামেই ডাকা হোক, শাস্ত্র অনুযায়ী দেবী এখানে বিমলা রূপে পরিচিত। আর, তাঁর ভৈরবের নাম সম্বর্ত।
মুর্শিদাবাদের লালবাগ কোর্ট রোড রেল স্টেশন থেকে তিন মাইল দূরে কিরীটকণা বা কিরীটকোণা গ্রামে এই মন্দির। সতীপীঠ বা উপপীঠই হোক, দেবী এখানে অত্যন্ত জাগ্রত। এই মন্দিরে দেবীর কোনও মূর্তি নেই। আছে শুধু একটি উঁচু পাথরের ওপর বেদী। সেই বেদীর ওপর আবার আরেকটি ছোট বেদী আছে। যাকে দেবীর কিরীট বলে পূজা করা হয়।
এখানে প্রতিদিন দেবীর নিত্যপুজো হয়। দুপুরে ভাজা, তরকারি ও মাছ-সহ অন্নভোগ হয়। অন্নভোগে মাছ থাকা বাধ্যতামূলক। কালীপুজোর দিন রাতভর দেবীর আরাধনা হয়। পুজো শেষে ছাগলও বলি দেওয়া হয়। বহু ভক্ত এখানে মানত করেন। তাঁদের দাবি, এখানে দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। মানত করলে তা পূরণ হয়। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে, এই সতীপীঠকে বাংলার অন্যতম আদি তীর্থক্ষেত্রে রূপে বর্ণনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন- দীপাবলিতে দেশ-বিদেশ থেকে আসেন লক্ষাধিক ভক্ত, এতটাই জাগ্রত বয়রা কালী মন্দির
দেবী কতখানি জাগ্রত, তা নিয়ে এখানে বিভিন্ন কাহিনি প্রচলিত আছে। কথিত আছে, এখানে আগে ১৭২ ঘর পান্ডা থাকত। একবার আফগান আক্রমণের ভয়ে দেবীর কিরীট সংলগ্ন পশ্চিমমুখী মন্দির থেকে দক্ষিণমুখী গুপ্তমঠে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। ওই কিরীট থাকে লাল রেশমি কাপড়ে মোড়া অবস্থায় একটি কলসে। পান্ডারা তা নিজেদের মধ্যে ঠিক করে দেখবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে জনাকয়েক সেটা দেখেন। তা দেখামাত্র ওই পান্ডারা অন্ধ হয়ে যান বলেই কথিত আছে। এরপর দেবীর রোষানলে পড়ে পান্ডাদের ১৭২টি পরিবারেরর বিনাশ ঘটে বলেই দাবি করেন ভক্তরা।