শেক্সপিয়র বলেছিলেন "হোয়াটস ইন আ নেম'? সত্যিই কি নামে কিছুই আসে যায়? উত্তর বলছে, অবশ্যই যায়। মজার এক কাণ্ড ঘটেছে নাম নিয়েই। সম্প্রতি এক অনলাইন বই বিপণন সংস্থার বিজ্ঞাপনে একটি বইয়ের মলাটের ওপর বড় করে সত্যজিতের ছবি দেওয়া। হ্যাঁ, বাঙালির বড় আপন সত্যজিৎ রায়। ছবি দেখে চিনতে ভুল হয় না। এক ঝলক দেখলে আপনি ভাবতেই পারেন ফেলুদা সমগ্র, তারিণী খুড়ো কিংবা প্রফেসর শঙ্কুর কোনো বই।
বসার ঘরের সেগুন কাঠের বুক শেল্ফ সাজানো যদি আসল উদ্দেশ্য হয়, আপনি নির্দ্বিধায় আর কিছু না দেখেই অর্ডার দিতে পারেন। তবে ডেলিভারি হিসেবে যা পাবেন, তা নিছক ফেলনা তো নয়ই, বরং বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। নিজের অজান্তেই আপনার হাতে চলে আসবে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পের সম্ভার। এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসবে, তা কীভাবে সম্ভব? খুলে বলা যাক সেকথা।
বিভূতিভূষণের বইয়ে শরদিন্দুর ছবি
খুব সম্ভবত এটি যান্ত্রিক ত্রুটি নয়। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পের সম্ভারের ওপর লেখকের ছবি বসানোর কাজটি যাঁর করার কথা, তিনি দুই মানিকে (সত্যজিৎ রায় বাঙালির কাছে তাঁর ডাকনাম মানিক-এও সমানভাবে পরিচিত) খানিকটা গুলিয়ে ফেলেছেন। অথবা তিনি শুধু নামটিই শুনেছিলেন, পদবী শোনেন নি। ফলস্বরূপ কী হয়েছে? মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোটগল্পের সম্ভারের মলাটে গেল সত্যজিতের ছবি।
এ ঘটনা যে প্রথমবার ঘটল, তা নয়, এর আগে অন্য এক সংস্থা ব্যোমকেশ-স্রষ্টা শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ব্যবহার করেছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা 'চাঁদের পাহাড়' উপন্যাসের মলাটে। খবরে প্রকাশ, এই বইটি নাকি আবার শহরের কোনও এক স্কুলে নবম শ্রেণীর পাঠ্যও।
আরও পড়ুন: সুখী হওয়ার সহজ উপায়- হাসুন প্রাণ ভরে
বিষয়টি নিছকই মজার হতে পারত। কিন্তু গোল বাঁধছে অন্যখানে। দেড়শ বছর আগে কার্ল মার্ক্স এক তত্ত্বের কথা বলে গিয়েছিলেন। বিচ্ছিন্নতাবাদ তত্ত্ব (অ্যালিয়েনেশন থিওরি), যা কিনা বলে এমন এক সামাজিক অবস্থার কথা, যেখানে শ্রমিক তাঁর শ্রমজাত পণ্যের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন। এও কি তাই নয়? জীবন ধারণের জন্য মগজ বেচা থেকে শ্রম বেচা, আমরা যারা যে কাজই করি না কেন, এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়ে, আমাদের নিজেদের সৃষ্টি থেকেই কি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি না আমরা? ভাবনার বিষয় নিশ্চয়ই।