রাখি শর্মার বাড়ি কলকাতায়। পেশায় কনটেন্ট রাইটার। দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন মুম্বইতে। রাখির বড় হওয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন তাঁর জেঠু- অনিল। সত্তর পেরনো অনিল দীর্ঘদিন ধরে ভুগছিলেন ক্যান্সারে। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি রাখি খবর পেলেন, জেঠু আর নেই।
সে এক আশ্চর্য অসহায় অবস্থা! প্রিয় মানুষটি শেষ শয্যায় শুয়ে আছেন কলকাতায়। আর রাখি ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন মুম্বইতে৷ তখনও লকডাউন শিথিল হয়নি। ডেমেস্টিক ফ্লাইট, ট্রেন- সবকিছুই বন্ধ। অসহায় রাখি নিয়মিত খবর নিতেন জেঠুর শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের প্রস্তুতির। ফোনে, মেসেজে ছুঁয়ে থাকতেন আত্মীয়দের৷ কিন্তু সে আর কতটুকু? আক্ষেপ হয়তো থেকেই যাবে- প্রাণপ্রিয় জেঠুকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেননি রাখি।
রাখির মতো সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। কয়েকশো বা কয়েক হাজার মাইল দূর থেকে প্রিয়জনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারেন না তাঁরা। লকডাউন আর করোনায় সেই সংকটের তীব্রতা আরও বেড়েছে। এখনও বন্ধ আন্তর্জাতিক উড়ান, ডোমেস্টিক ফ্লাইট চালু হলেও বন্ধ ট্রেন চলাচল। তাই আচমকা মৃত্যুর খবর পেয়েও শ্রদ্ধা জানাতে সশরীরে হাজির হতে পারছেন না প্রবাসীরা।
আরও পড়ুন, নিজের কিমবা কাছের মানুষটি অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছে, কীভাবে বোঝা যায়? করণীয়ই বা কী?
এই সমস্যার মুশকিল আসান হয়ে বাজারে হাজির হয়েছে একটি ওয়েবসাইট। নাম- ট্রিবিউটস। পয়সা ফেললে এখানেই অনলাইনে স্মরণসভা করা যাবে। দেশ বিদেশ থেকে প্রয়াত ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন আত্মীয়, পরিজনেরা। সেই সব মেসেজ, ফটেগ্রাফ, ভিডিও সংরক্ষণ করা হবে চিরতরে।
ট্রিবিউটসের বয়স কিন্তু প্রায় ৫ বছর। সংস্থায় সিইও রাজকুমার জালান জানালেন, ২০১৫ সালেই তাঁরা এই ওয়েবসাইট লঞ্চ করেছিলেন। কিন্তু তেমন সাড়া মেলেনি। লকডাউন শুরুর পর তাঁদের মনে হল, এই প্রোডাক্টটিকে তুলে ধরার আসল সময় উপস্থিত। শুরু হল প্রচার। সাড়াও মিলছে যথেষ্ট।
কেমন করে কাজ করে এই ওয়েবসাইট? প্রথমে প্রয়াত ব্যক্তিকে নিয়ে একটি পেজ তৈরি করে থিম, ছবি ইত্যাদি ব্যবহার করে সেটির ডিজাইনের কাজ সারতে হবে। এরপর ওয়েবসাইটের কর্তারা পেজটিকে অ্যাপ্রুভ করলেই সেটি 'লাইভ' হয়ে যাবে৷ এর পরের ধাপে প্রয়াত ব্যক্তির বন্ধু ও পরিজনদের হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, ইমেল, মেসেজ ইত্যাদির মাধ্যমে পেজে ইনভাইট করতে হবে। জালানের কথায়, "এই পেজটি পরিবারের আজীবনের সম্পদ হয়ে রয়ে যাবে। যত ইচ্ছে মেসেজ, ছবি, ভিডিও শেয়ার করা যাবে এখানে৷ খবরের কাগজে শোকবার্তার নির্দিষ্ট শব্দসংখ্যা থাকে। এখানে তেমন কিছু নেই।" প্রয়াত ব্যক্তির জন্মদিন ও মৃত্যুদিনের আগের ৫দিন পেজটি ওয়েবসাইটের হোমপেজে থাকবে।
আরও পড়ুন, নেমসেকের ইরফান এবং আমাদের বাবারা…
ইংরেজির মতো হিন্দিতেও এমন পেজ রয়েছে। তার নাম 'শ্রদ্ধাঞ্জলি'। ওয়েবসাইটটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পেজ বিনামূল্যে তৈরি করা যাবে। তারপর প্রিমিয়াম প্যাকেজ রয়েছে সর্বোচ্চ ৫১ হাজার টাকা আর সর্বনিম্ম ১০০০ টাকার। দামের হেরফের হয় মূলত ফিচারের জন্য। তবে দেশের জন্য যুদ্ধ করতে গিয়ে যাঁরা শহীদ হয়েছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা জানাতে কোনও খরচ লাগবে না। নিখরচায় শ্রদ্ধা জানানো যাবে সেলেব্রিটিদেরও।
অভিষেক খৈতানের বাড়ি অসমে। তাঁরা বাবা শচীন বহুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। অভিষেক বলেন, "বাবার শেষকৃত্যে অনেকেই আসতে পারেননি। ট্রিবিউটসের মাধ্যমে তাঁরা শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বহু নতুন তথ্য জানতে পেরেছি বাবাকে নিয়ে। এই পেজটি অমূল্য পারিবারিক সম্পদ হয়ে রইল।"
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন