অস্টিও-আর্থরাইটিসের কারণে হাঁটুর ব্য়থায় ভুগছেন অধিকাংশ মানুষ। ৪০ এর দোরগোড়ায় পৌঁছনো মাত্রই হাঁটুর ব্যথায় কাতর হয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মূলত মহিলাদেরই এই সমস্যা দেখা যায়। কষ্টদায়ক এই ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নেই কোনো ওষুধ, নেই কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা। ডাক্তারদের মতে, বয়স হলে যেমন চুলে পাক ধরে, ঠিক তেমনই বয়স হলে দেখা দেবে অস্টিও-আর্থরাইটিস। অর্থাৎ কিছু মানুষ নয়, সকলকেই ভুগতে হবে হাঁটু ব্যথায়। কিন্তু জীবনযাত্রায় বদল আনলে হাঁটুর ব্যথা অনেকটা বশে রাখা সম্ভব। মনে রাখবেন, অস্টিও-আর্থরাইটিস এক দিনে হয় না।
কী এই অস্টিও-আর্থরাইটিস, এবং এর হাত এড়িয়ে যাওয়ার উপায়ই বা কী, জানাচ্ছেন ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়।
কেন হয় অস্টিও-আর্থরাইটিস?
পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের ওঠাবসা অনেক বেশি হয়। যে কারণে মূলত ভারতে মহিলারাই অস্টিও-আর্থরাইটিসে ভোগেন। এছাড়া ছোটবেলায় ব্যথা লাগলে বা খেলাধূলা বেশি করলে, বয়সকালে হাঁটুর ব্যথা অবধারিত।
বয়স হলে আর্টিকুলার কার্টিলেজ নষ্ট হতে থাকে, অর্থাৎ দুটো হাড়ের মধ্যবর্তী তরল পদার্থ কমে যায়, তখন পা ভাঁজ করার সময় দুটি হাড়ের মাঝে ঘর্ষণ হয়, শরীরের ভার নিতে পারে না। যার ফলে ব্যথা হতে শুরু করে। কারোর ক্ষেত্রে হাঁটুর কাছ থেকে পা বেঁকে যেতে দেখা যায়।
ব্যথার কবল থেকে বাঁচার উপায়?
ডাঃ বন্দ্যোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এই রোগের খপ্পর থেকে সে অর্থে মুক্তি নেই। তবে রোগের প্রকোপ যাতে দেরিতে দেখা দেয়, সেই চেষ্টা করা যেতে পারে। একেবারে নির্মূল করে দেওয়ার মত কোনো অস্ত্র নেই। ব্যথার ওষুধ, ফিজিওথেরাপি আর শরীরচর্চাই একমাত্র উপায়। কিন্তু যদি ছোটবেলা থেকে নিয়ম মেনে চলা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে ব্যথায় কাতর হতে হবে না।
আজ যে শিশু জন্মগ্রহণ করবে, তাকে যাতে পরবর্তীকালে অস্টিও-আর্থরাইটিসে ভুগতে না হয়, তার জন্য আগাম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে অভিভাবকদের। সুস্থ জীবনধারার মধ্যে দিয়ে নিয়ে যেতে হবে শিশুটিকে। পর্যাপ্ত শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও পুষ্টি তাকে দিতে হবে।
ওজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ওজন বেশি হওয়া মানেই আগামীদিনে খুব শীঘ্রই হাঁটুর ব্যথায় ভুগতে হবে। মাঝবয়সের আগেই ওজন বেশি থাকলে তা কমিয়ে ফেলা উচিত। কারণ হাঁটুর ব্যথায় এমনিতেই শারীরিক কর্মক্ষমতা কমতে থাকে। তখন ওজন কমানো যায় না।
কোথাও ব্যথা পেলে, ছোটবেলাতেই তার যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে।
ব্লাড সুগার, থাইরয়েডের মত রোগ শরীরে থাকলে ওষুধ খেয়ে তা বশে রাখা উচিত।
যখন একবার ব্যথা হবে তখনই সাবধান হয়ে যেতে হবে। প্রাথমিক ভাবে যা মেনে চলবেন - হাঁটু মুড়ে না বসা, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা যথাসম্ভব কম করা যায়, প্রয়োজন না থাকলে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে না থাকা।
জুতোর সঙ্গে কিন্তু কোমর-হাঁটুর ব্যথার সম্পর্ক আছে। চেষ্টা করুন সঠিক মাপের, ভাল মানের জুতো পরার। জুতো কেনার সময় নজর রাখুন, নরম কুশন-যুক্ত সোল-এর দিকে। শক্ত জুতোয় পায়ে ব্যথা বাড়ে।
খাবারের তালিকায় রাখুন প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ফলমূল। ব্রকোলি, গাজর, বিনস্, অঙ্কুরিত ছোলা খান বেশি পরিমাণে। দুধ সহ্য হলে রোজ খেতে পারেন, না হলে ছানা খান। ডিম খান নিয়মিত। এতে প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম-এর ঘাটতি পূরণ হবে।
উল্লেখ্য, নিজের ইচ্ছামতো কোনও ব্যথার ওষুধ বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়া শুরু করবেন না। চিকিৎসকের পরামর্শেই ওষুধ খান।