আজকালকার ব্যস্ত জীবনে শরীরকে সুস্থ রাখা যেন একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে বাচ্চাকে স্কুলের জন্য তৈরী করা তারপর বাড়ির টুকটাক কাজ, তারপর টিফিন গুছিয়ে বর ও নিজে বেরিয়ে পড়া অফিস এর উদ্দেশ্যে। কাজের চাপ এ যেন জল খাওয়াটুকুর সময় পাওয়া যায়না , কিন্তু যেই লাঞ্চ হলো তারপর থেকেই চোখ বুজে আসে ঘুমে। কাপের পর কাপ কফি খেয়েও যেন ঘুম তাড়ানোই যায়না। এ এক বিশাল জ্বালা। যারা কর্মরতা শুধুমাত্র তাদেরই যে ব্যস্ততায় দিন কাটে তা কিন্তু নয় , যারা বাড়িতে থেকে সারাদিন ধরে সংসার সামলান , তাদের ব্যস্ততা কোনো অংশেই কম নয় । কিন্তু আপনার যদি সারাখুনই ঘুম পাই এবং ঘুমিয়েও পড়েন তাহলে কিন্তু সেটা বেশ চিন্তার বিষয়।
অতিরিক্ত ঘুমের কারণ –
শারীরিক এবং মানসিক নানা কাজের চাপে অতিরিক্ত ঘুম পায় , তাছাড়াও আরো কিছু কারণ রয়েছে সেগুলি হলো-
১) ঠিক সময় না ঘুমোনো –
রাতে অনেকেই আছে যারা অনেক রাত করে ঘুমোন তাই পর্যাপ্ত ঘুম হয়না আর সারাদিন ঘুম পায় শরীরে অস্বস্তি লেগেই থাকে।
২) নানান অসুখ –
আজকাল লাইফস্টাইল এর জন্য অসুখ নিত্য সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে , মহিলাদের থাইরয়েডে , পি সি ও ডি , মধুমেহ ইত্যাদি সমস্যা থাকে। এগুলো কিন্তু শরীরে ক্লান্তি আনে এবং ফলস্বরূপ অতিরিক্ত ঘুম পায়।
৩) অবসাদ –
জীবনে নানান প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে আমাদের যেতে হয়, সে কাজের চাপ হোক বা টাকাপয়সার চিন্তা বা শরীরের চিন্তা এসব নানান সমস্যার জন্য অনেকসময় অবসাদ হয়, শুধু শরীর খারপ হলেই যে ঘুম পায় তা কিন্তু নয় মানসিক ক্লান্তিতেও আমাদের বড্ডো বেশি ঘুম পায়। তাই নিজেই নিজের অবসাদ গুলো চিনে সেটা কাটিয়ে তোলার ব্যবস্থা করুন।
৪) ভারী খাবার খাওয়া –
দুপুরে যদি খুব বেশি ভারী খাবার খান তাহলে কিন্তু দিনের বেলা ঘুম পেতে বাধ্য , আসলে আমাদের খাবার হজম হতে বেশ খানিকটা সময় লাগে , বেশি তেল মশলাযুক্ত খাবার, হাই প্রোটিন খাবার এগুলো হজম হতে তুলনায় আরো বেশি সময় লাগে। দুপুরে যদি খুব বেশি পরিমানে ভাত খান তাহলে কার্বোহাইড্রেটের পরিমান অনেক বেশি চলে যায় শরীরে তার কারণে ঝিমুনি আর ঘুম পায়। বলছিনা পেট খালি রাখুন বা আধপেটা খান, কিন্তু আপনার শরীরে যতটা প্রয়োজন তার থেকে বেশি না খাওয়াই ভালো।
৫) শরীরের ধরণ –
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে আমাদের শরীরের ৩ প্রকার দোষ হতে পারে- বাত, পিত্ত এবং কফ। বাত অর্থাৎ যাদের শরীরে হাওয়া বা গ্যাসের পরিমান বেশি, পিত্ত অর্থাৎ যাদের শরীর খুব বেশি মাত্রায় গরম এবং কফ অর্থাৎ যাদের শরীরে জলীয়ভাব বেশি থাকে। যাদের শরীরে জলের পরিমান বেশি তাদের মধ্যে সবসময় একটা ঘুম ভাব রোএ যায় একটা ক্লান্তিবোধ লেগেই থাকে।
কি কি হতে পারে এর জন্য?
১।ঘুমের আধিক্যতার জন্য আপনার শরীরে থাবা বসাতে পারে ডায়বেটিস।
২।যাদের বেশি সময় ধরে ঘুমের অভ্যেস, একদিন কম ঘুমালেই, তাদের মাথা যন্ত্রণার মতো সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
৩।আবার দীর্ঘক্ষণ শোয়ার ফলে, হাত চলা বা কোনো রকম মুভমেন্ট হয় না, ফলে মেদ বাড়ার সম্ভাবনা বেশি।
৪।অন্যদিকে এই একই কারণে কোমরে , পিঠে যন্ত্রনা হতেও দেখা যায় অনেকের।
৫।মূলত আগে যেমন বললাম, কোনো মানসিক অবসাদ থাকলে, মানুষ অনেক সময় বেশি ঘুমায়। কিন্তু তাতে মানসিক অবসাদ আরো বাড়ে।
আর সব শেষে যেটি না বললেই নয়, সেটি হলো হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা দ্বিগুন বাড়ায় ওভারস্লিপিং। তাই এই অভ্যেস থাকলে, আজই বদলান।