Advertisment

Menstrual Hygiene Day 2020: নারী শরীর বিজ্ঞাপিত হবে, অথচ পিরিয়ড নিয়ে এখনও ফিসফাস

এই একুশ শতকেও নারী শরীর পণ্য হচ্ছে রোজ, অথচ নারী শরীরের বিজ্ঞান, বিশেষ শারীরিক অবস্থা, বা শারীরিক সমস্যার প্রতি এতটুকু সংবেদনশীল হতে অসুবিধে আছে সমাজের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে

পাড়ায় নতুন ওষুধের দোকানটা হওয়ায় স্বস্তি বেড়েছে মোহরদের। বাড়িতে বুড়ো দাদু আছে। রাত বিরেতে কিছু হলে ওষুধ পত্তর কিনতে এখন আর বড় রাস্তায় যেতে হয় না। তবে মোহর কিমবা আর্শি, টাপুরদের ঝক্কি এতটুকু কমেনি। মাসের পাঁচটা দিন প্যাড ফুরিয়ে গেলে ছুটতে হয় দূরের দোকানেই। না, বাপি কাকা অবশ্য থরে থরে স্যানিটারি ন্যাপকিন সাজিয়ে রেখেছেন দোকানের শো কেসে, তবে কিনা টাপুরদের মায়েদের কড়া নির্দেশ- পাড়ার দোকান থেকে কেনা যাবে না প্যাড। সদ্য ক্লাস ফাইভে ওঠা আর্শিও মা-কাকিমাদের আলোচনা থেকে ভেবেই নিয়েছে ওষুধের দোকানে থাকে বটে, তবে ওসব একেবারে নিষিদ্ধ জিনিস।

Advertisment

কো-এডুকেশন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে তানিশী, পল্লবী আর ঋতজা। অফ পিরিয়ডে ছেলেদের সঙ্গে রীতিমতো দস্যিপনা করে বেড়ায়, তবে মাসের পাঁচটা দিন অন্যরকম। অর্ণবরা খেয়াল করে দেখেছে, এক একটা সপ্তাহ কেমন যেন দূরে দূরে থাকে মেয়েগুলো। কারণটা অর্ণব বোঝেনা, পুরোপুরি বোঝে না ঋতজাও। ছবিটা স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে একই। এই একুশ শতকেও নারী শরীর পণ্য হচ্ছে রোজ, অথচ নারী শরীরের বিজ্ঞান, বিশেষ শারীরিক অবস্থা, বা শারীরিক সমস্যার প্রতি এতটুকু সংবেদনশীল হওয়াতে অসুবিধে আছে সমাজের। মেয়েদের পিরিয়ডস এবং সেই সংক্রান্ত যাবতীয় আলোচনা খোলাখুলি করতে সমস্যা কিন্তু শুধুই পুরুষদের নয়। গার্লস স্কুলেও এই নিয়ে চলতে থাকে অহেতুক লুকোচুরি। অথচ এই শহরেই এক তরুণ লড়াই করে যাচ্ছে মেন্সট্রুয়াল হাইজিন নিয়ে। হ্যাঁ, ছাপার ভুল নয়। বছর তেইশের তরুণ। শোভন মুখার্জি। পোশাকি নামের চেয়ে প্যাডম্যান হিসেবেই এখন অনেক বেশি জনপ্রিয় শোভন।

publive-image শহরে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ। বাঁ দিকে কলকাতার প্যাডম্যান শোভন।

কী কাজ প্যাডম্যানের। শহরের ৭০ টি শৌচাগারে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন সরবরাহ করে শোভন। সম্পূর্ণ ব্যাক্তিগত উদ্যোগে। কী ভাবে 'মেয়েদের সমস্যা' নিয়ে কাজ করার তাগিদ অনুভব করলেন শোভন? "আমার বাড়িতে প্রথম থেকেই এইসব নিয়ে খুব খোলামেলা আলোচনা হত। তাই এদিক থেকে আমি প্রিভিলেজড। কলেজ জীবনে একটা ম্যাগাজিন করতাম। সেই সুত্রে বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। সে সময় প্রথম বুঝতে পারি, রাস্তা ঘাটে যখন তখন পিরিয়ড শুরু হলে মেয়েদের কী ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। আমার বান্ধবীদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করে জানতে পারি পিরিয়ডের দিন প্রায়শই এগিয়ে পিছিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মেয়েদের প্রস্তুতি না থাকলে কী ধরণের অসুবিধে হয়, আমি দেখেছি। তখনই প্রথম মাথায় আসে পাবলিক টয়লেটে স্যানিটারি ন্যাপকিন রাখার কথা"।

আরও পড়ুন, সরস্বতীর নারী দিবস! ফুচকা বেচেন, আত্মসম্মান নয়!

সম্প্রতি এই শহরে সামাজিক ট্যাবুর বিরুদ্ধে গলা চড়ছে মাঝে মধ্যেই। কখনও সাহিত্যে, কখনও সিনেমায়, কখনও বা অন্য কোনও মাধ্যমে। এইভাবে একটু একটু করে চিরাচরিত জীর্ণ ধারণা থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসছে কলকাতা, মনে করছে শোভন। অভিনেতা ঋতাভরী চক্রবর্তীর সঙ্গে একটি সিনেমার প্রোমোশনের সূত্রে আলাপ প্যাডম্যানের। ঋতাভরীর সঙ্গে যৌথ প্রয়াসে সারা কলকাতায় স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে শোভন। এবার হয়তো সারা কলকাতা জুড়েই সব শৌচাগারে নামমাত্র দামে সজজলভ্য হবে প্যাড, আশাবাদী শোভন।

মেয়েদের মাসিক নিয়ে অকারণ ফিসফাসগুলো আসলে স্কুলস্তরে যৌনশিক্ষা চালু না করার ফল, এমনটাই বিশ্বাস শোভন মুখার্জির। ছক ভেঙে এই বয়সে এমন লড়াইয়ে নামার জন্য সবার কাছেই যে বাহবা পেয়েছেন তেমনটা নয়। তবে সাময়িক লড়াইয়ে বিশ্বাস করে না সে। বরং লড়াই কঠিন হলেও, প্রচারের সব আলো সরে গেলেও ধারাবাহিক ভাবে নিজের কাজ করে যাওয়াই তাঁর আদর্শ। ৮ মার্চ আসে, যায়। আসবে যাবেও। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পেড়িয়ে বছরের বাকি দিনগুলোতেও সত্যিকারের আধুনিক হই আমরা? শেভিং ক্রিমের মতোই কালো প্লাস্টিক ছাড়াই দোকানে বিকোক স্যানিটারি ন্যাপকিন। আর সমাজের সব স্তরের মেয়েদের কাছেই সহজলভ্য হোক তা। এইটুকুই চাওয়া প্যাডম্যানের।

Advertisment