লালমাটির দেশ বীরভূম, চিরকালই তন্ত্রসাধনার অন্যতম কেন্দ্র। এখানে রয়েছে একের পর এক সতীপীঠ। রয়েছে, বহু বিখ্যাত সিদ্ধপীঠ, শক্তিপীঠ। সেই বীরভূমেই কিন্তু অতি জাগ্রত এক মন্দির রয়েছে। তবে, এই মন্দিরের নাম বীরভূমের অন্যান্য নামী তীর্থস্থানের আলোয় ঢাকা পড়ে গিয়েছে।
যদিও, ভক্তদের কাছে এই মন্দিরেরর গ্রহণযোগ্যতা অন্যান্য নামী তীর্থস্থানগুলোর চেয়ে কোনও অংশে কম না। সেই তীর্থস্থান বা মন্দির হল দুবরাজপুরের শ্মশানকালী মন্দির। যা এলাকাবাসীর কাছে পরিচিত পাহাড়েশ্বর শ্মশানকালী মন্দির নামে। দুবরাজপুর শহরের কাছে মামা-ভাগ্নে পাহাড়। সেই পাহাড়ি এলাকাতেই রয়েছে এই প্রাচীন শিব-কালী মন্দির।
কথিত আছে এই মন্দির বেশ কয়েক শতাব্দী পুরোনো। ষোড়শ শতাব্দী এই কালীমন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। যা তৈরি করিয়েছিলেন বীরভূমের রাজা রামজীবন চৌধুরী। এখানকার মূর্তি মাটির তৈরি। যার উচ্চতা প্রায় ১২ ফুট। দেবী এখানে বিবসনা। তাঁর পদতলে শুয়ে আছেন মহাদেব। প্রথা অনুযায়ী, এখানে প্রতি বছর দুর্গা ত্রয়োদশীতে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণের কাজ।
শ্যামাপূজার দিন থেকে শুরু হয় পূজা। তারপর সারা বছর পূজা চলে সেই মূর্তিতে। দুর্গা একাদশীর দিন হয় মূর্তি বিসর্জন। স্থানীয় হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন এই মূর্তিকে লক্ষ্য করে গালাগালি করেন। তারপরই হয় দেবীমূর্তির বিসর্জন। না-হলে এখানে দেবীমূর্তিকে বিসর্জন দেওয়া হয় না।
আরও পড়ুন- রাজ্যেই জাগ্রত মন্দির, যেখানে ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন পবনপুত্র, রক্ষা করেন বিপদে
বছরে প্রতিদিনই এই মন্দিরে ভক্তদের আনাগোনা থাকে। তার মধ্যে প্রতি শনি ও মঙ্গলবার এখানে বিশেষ পুজো হয়। ওই দিনগুলোতে তাই ভিড় বাড়ে। সারাবছর ধরেই এখানে পুজো চলে। বিশেষ তিথিতে হয় বিশেষ পুজো। বর্তমানে অবশ্য শ্মশান আর এই মন্দিরের পাশে নেই। লোকালয় বৃদ্ধি পাওয়ায় একটু দূরে চলে গিয়েছে।
তবে, তাতে শ্মশানকালী নামটা বদলায়নি। দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ভক্তরা আসেন দেবীকে প্রণাম করতে। তাঁর আশীর্বাদ নিতে। ভক্তদের বিশ্বাস, দেবীর কাছে প্রার্থনা করলে মনস্কামনা পূরণ হয়। কারণ, এখানকার দেবী অত্যন্ত জাগ্রত। আর, সেই কারণেই অনেক ভক্ত এই মন্দিরে আসছেন বেশ কয়েক পুরুষ ধরে।