কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলের বুক চিরে বয়ে চলা একসময়ের ভরা যৌবনের আদিগঙ্গার দু'পাড়ে গড়ে উঠেছিল বহু ঘাট ও মন্দির। উইলিয়াম টলির পরিচয় বহন করে সেই আদিগঙ্গা আজ পরিচিত টালিনালা নামে। যার ওপরে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্রিজ। এর মধ্যে টালিগঞ্জ ফাঁড়ি অঞ্চলে রয়েছে টালিগঞ্জ ব্রিজ। এখানে প্রদীপ সিনেমা হলের উলটোদিকে রয়েছে ঠাকুর পঞ্চাননের মন্দির। যিনি আসলে ভগবান শিবেরই এক রূপ।
এই মন্দির বহুবার সংস্কার হয়েছে। ফলে, দেখলে মনে হবে বয়স খুব একটা বেশি না। যদিও সাড়ে তিনশো বছর পেরিয়ে গিয়েছে এর ভিতরে পূজিত হওয়া বিগ্রহের বয়স। ভক্তদের অনেকে এই পঞ্চানন ঠাকুরকে বলেন পাঁচু ঠাকুর। যিনি নাকি ভগবান শিবের লৌকিক রূপ নন। আসলে, তাঁর পুত্র। ভক্তদের কাছে তিনি শিশুরক্ষক, অঞ্চলরক্ষক, শস্যরক্ষক, সন্তানদাতা। আর, এই সব কারণেই রক্তবর্ণ দেব পঞ্চাননের মূর্তি ও ঘটের পুজো করা হয়।
কথিত আছে এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য। পঞ্চানন ঠাকুর তাঁকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, আদিগঙ্গার পাড়ে রয়েছেন। নিয়ে এসে পুজো করতে। বারবার একই স্বপ্ন দেখায় শেষ পর্যন্ত বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য আশপাশের বাসিন্দাদের নিয়ে গিয়েছিলেন আদিগঙ্গার পাড়ে। সেখানে স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী তিনটি লাল পাথর তিনি উদ্ধার করেন। শিল্পীর সাহায্যে সেই পাথর দিয়েই তৈরি হয় পঞ্চানন দেব, শীতলা, জ্বরাসুরের মূর্তি। মন্দিরে পঞ্চানন দেব রয়েছেন মধ্যে। ডানদিকে শীতলা দেবী ও বামদিকে রয়েছে জ্বরাসুরের মূর্তি।
কথিত আছে, দীর্ঘদিন এখানে অস্থায়ী মন্দির ছিল। ১৯৩৬ সালে টালিগঞ্জ ব্রিজ তৈরি হয়। ব্রিজের কার্যনির্বাহী ইঞ্জিনিয়ারকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন পঞ্চানন ঠাকুর। তার জেরে ওই ইঞ্জিনিয়ার এখানে বড় আকারে পাকা মন্দির বানিয়ে দেন। বংশ পরস্পরায় বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্যের উত্তর পুরুষরাই এখানকার সেবায়েত।
আরও পড়ুন- বাংলার জাগ্রত বৈদ্যনাথ মন্দির, ভক্তরা ডাকেন ছোট কাছারি নামে
স্থানীয় বাসিন্দাদের বিশ্বাস, মন্দিরটি অত্যন্ত জাগ্রত। মানত করলে, অথবা প্রার্থনা করলে ফল দেয়। কথিত আছে, আগে যখন আদিগঙ্গা দিয়ে স্টিমার যেত, তখন আজ যেখানে টালিগঞ্জ ব্রিজ, সেখানে হামেশাই নৌকো বা স্টিমারডুবি ঘটত। মাঝি-মাল্লারা জায়গাটাকে বলতেন, 'বাবা পঞ্চাননের দহ'। তখন দুর্ঘটনা থেকে বাঁচতে তাঁরা এই মন্দিরে নিয়মিত পুজো দিতেন।