বাংলায় বৈষ্ণব ধর্মচর্চার কেন্দ্র হিসেবে পানিহাটির নাম বরাবর সামনের সারিতেই ছিল। রবার্ট ক্লাইভের জমানায় এখানকার দণ্ডমহোৎসবতলার কিছুটা আগে বাজারের ঘাট এলাকায় নাটোরের রাজমাতা রানি ভবানীর দেওয়ান গৌরীচরণ রায়চৌধুরী পানিহাটির জমিদারি পান। তাঁর ছেলে জয়গোপাল রায়চৌধুরী বাজার ও ঘাটের প্রতিষ্ঠা করেন। সেই বাজারের কাছেই পুরোনো দোতলার দালানে রায়চৌধুরীদের রাধাগোবিন্দ রয়েছে।
আগে ছিল প্রাচীন মন্দিরে। তা ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এই দোতলার দালানেই থাকে কষ্টিপাথরের গোবিন্দ আর অষ্টধাতুর রাধা মূর্তি। কাছেই একটি আটকোণা, নয় চূড়ার রাসমঞ্চ এবং আটচালার চারটি শিবমন্দির আছে। প্রতিবারের মত এবারও এখানে স্নানযাত্রা, ঝুলন, জন্মাষ্টমী, সাড়ম্বরে পালিত হল। দোল এবং রাসযাত্রাও ঐতিহ্য মেনেই হবে। রাসের সময়টায় রাসমঞ্চে বিগ্রহ বসিয়ে হয় উৎসব।
কীভাবে যাওয়া যায় এই পানিহাটি রাসবাড়ি, রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দিরে? খুবই সহজ। হাওড়া, শিয়ালদহ বা শ্যামবাজার থেকে বিটি রোডগামী বাসে চেপে নামতে হবে সোদপুরে। সেখান থেকে হেঁটে অথবা অটোয় চেপে যাওয়া যায় পানিহাটি ফেরিঘাট। তার একদম লাগোয়া রাসবাড়ি ও রাধাগোবিন্দ জিউয়ের মন্দির। আবার শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে এসে নামতে হবে সোদপুর স্টেশনে। সেখান থেকেও অটোয় চেপে যাওয়া যায় পানিহাটি ফেরিঘাট। আবার, কোন্নগর ফেরিঘাট থেকেও অহরহ লঞ্চ আসছে পানিহাটি ফেরিঘাটে।
আরও পড়ুন- অনেকে বলে ছোট দক্ষিণেশ্বর, রানি রাসমণির নাতির স্ত্রী বানিয়েছিলেন এই মন্দির
এর কাছেই রয়েছে রাঘব পণ্ডিতের আবাস। বিখ্যাত চিঁড়ার মেলা এই খানেতেই হয়। সেই সবও এখানে দেখে নিতে পারেন। আবার কিছুটা দূরেই রয়েছে রানি রাসমণির নাতির স্ত্রী গিরিবালা দেবীর ঠাকুরবাড়ি। যাকে ছোট দক্ষিণেশ্বরও বলা হয়। পানিহাটি বাজারের ঘাট এবং রাসমঞ্চ দেখার পর সেখান থেকে গঙ্গার ধার দিয়ে হেঁটে চলে যেতে পারেন গিরিবালা ঠাকুরবাড়ি।
ফেরার সময় গিরিবালা ঠাকুরবাড়ির কাছ থেকে টোটো পেতে পারেন। যা সোজা পৌঁছে দেবে পানিহাটির মোল্লারহাট স্টপেজে। সেখান থেকে শ্যামবাজার এবং হাওড়াগামী বাস পেয়ে যাবেন। অথবা মোল্লার হাট থেকে অটোয় চেপে চলে আসতে পারেন ডানলপ। সেখানেই রয়েছে বরানগর মেট্রো স্টেশন এবং বরানগর রেল স্টেশন। চাইলে সেখান থেকে মেট্রো চেপে চলে আসতে পারেন ধর্মতলা। অথবা ট্রেন ধরলে শিয়ালদহ পৌঁছে যেতে পারেন।