আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশের একটা বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ অংশ তৈরি হয়ে যায় তিন বছর বয়সের মধ্যে। এই সময়ে আপনার সন্তানের সঙ্গে কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটলে তার প্রভাব থেকে যেতে পারে আজীবন। এবং সেই প্রভাব হতে পারে মানসিক, হতে পারে শারীরিক। তাই অভিভাবকেরা, সন্তানের রোজকার জীবনে ছাপ ফেলতে পারে, এমন ছোটখাটো ঘটনাকেও তাচ্ছিল্য করবেন না।
প্রথমে মাথায় রাখুন শিশুকালে কোন কোন ঘটনা বাচ্চার মনে প্রভাব ফেলতে পারে। পারিবারিক অশান্তি, ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স, শারীরিক এবং মৌখিক নিগ্রহ, অবহেলা, যৌন নিগ্রহ, চিকিৎসকদের মতে এ সব কারণ আকছার আমাদের সমাজে শিশুমনকে প্রভাবিত করে। এর ফলে প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছেও বহু ক্ষেত্রে রেশ থেকে যায় ব্যক্তির মধ্যে।
অত্যাধিক স্ট্রেস বা চাপের মধ্যে থাকলে কোনও শিশু নার্ভাস হয়ে যায়, খিটখিটে হয়ে যেতে পারে, অল্পে রেগে যেতে পারে অথবা অবসন্ন হতে পারে।
আরও পড়ুন: আজ থেকেই নজর দিন আপনার খুদের ডায়েট প্ল্যানে
এমন শিশুও আছে, যারা ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়াই দেখায় না। বেশ কয়েক দিন, সপ্তাহ এমন কী কয়েক বছর পর গিয়ে আচরণে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। ঘটনা পরবর্তী শক বা আফটার এফেক্ট থেকে বেরোতে কারোর সময় লাগে বহু দিন, কেউ বা কয়েক মুহূর্ত পরেই ভুলে যায়।
আঘাত খাওয়ার পর কে কত সহজে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারে, সেটা শেখা খুব দরকার। আঘাত যে কোনও ধরনের হতে পারে। মানসিক, শারীরিক, ব্যক্তিগত সম্পর্ক জনিত আঘাত, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আঘাত।
আমাদের মস্তিস্কে যে অংশ আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে, সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে তার নাম অ্যামিগডালা। এর দুটো ভাগ। বেসাল ট্রায়া টার্মিনাল এবং সেন্ট্রাল নিউক্লিয়াস। শৈশবে কোনো কারণে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পরলে সেন্ট্রাল নিউক্লিয়াস বেশি করে কাজ করতে শুরু করে। সেন্ট্রাল নিউক্লিয়াস কাজ করা মানেই আবেগের বশে সিদ্ধান্ত নেওয়া। অন্যদিকে আমাদের যুক্তিবাদী সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রন করে বেসাল ট্রায়া টার্মিনাল। যে সব শিশুর এই অংশ সতর্ক থাকে বেশি, তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত প্র্যাক্টিকাল হয়।
আতঙ্ক, অবসাদ কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের আচরণ দিয়ে বাচ্চাদের সামনে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করার চেষ্টা করুন। আপানার সন্তান কিন্তু আপানার আচরণকেই অনুসরন করার চেষ্টা করে। নিজে যে কোনও পরিস্থিতিতে মাথা ঠাণ্ডা রাখুন। নানা পরিস্থিতিতে সমাধানের জন্য আপনার সন্তানের পরামর্শও নিন। ওকে বোঝান ওর মতামত আপনাদের কাছে গ্রাহ্য। সন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করুন।