টাকা নয়, খাবার দাও। ক্ষুধার্ত পেটে দুটো খাবার দিলেই খুশি ওরা। তাদের এই আবদার মেটানোর চেষ্টায় তৎপর হয়েছেন একদল নতুন প্রজন্ম। হাতে টাকা নেই, আছে প্রবল ইচ্ছাশক্তি। যার ওপর ভর করেই প্রত্যেক রবিবার তারা খাবার জোগাড় করে পৌঁছে যায় দরিদ্রসীমার নিচে অবস্থিত মানুষগুলোর কাছে। পাওনা হিসাবে রয়েছে খালি পেটে দিন কাটানো শিশুগুলোর মুখের হাসি আর বড়দের প্রাণভরা আশীর্বাদ।
Food for poor hungry street children in Kolkata
দলের নাম রবিন হুড আর্মি। যেখানে টাকার বিনিময়ে লেনদেন হয়না খাবার। টাকা হাতে গুঁজে দিতে চাইলে, তারা আবেদন করে, "আপনি খাবার কিনে দিন। কোনো দোকানে খাবার অর্ডার দিয়ে দিলে আমরা খাবার আনতে চলে যাব সেখানে।"
রোজ কত যে খাবার অপচয় হচ্ছে তার ঠিক নেই। কখনও ভেবে দেখেছেন, আপনার আশপাশে কত মানুষ রোজ না খেতে পেয়ে দিন কাটাচ্ছেন? অনেকেই আধপেটা খেয়ে কোনক্রমে বেঁচে-বর্তে রয়েছেন। আপনার বেঁচে যাওয়া খাবার যদি কোনও অভুক্ত পেটের ক্ষুধা মেটাতে পারে, তাহলে কেমন হয়? ঠিক এমন ভাবনাই রয়েছে রবিন হুড আর্মির সদস্যদের মনে।
Food for poor hungry street children in Kolkata
Food for poor hungry street children in Kolkata
রেস্তোরাঁ হোক বা যে কোনো অনুষ্ঠান বাড়ির বেঁচে যাওয়া খাবার, তাই নিয়ে তারা হাজির হয় কলকাতার বস্তি এলাকায়। যেখানে সংসারের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, মানুষ আধপেটা খেয়ে কোনো রকম প্রাণে বেঁচে রয়েছেন। তবে এই তালিকায় থাকেন হাসপাতাল ফেরত রোগীরাও। যাঁদের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজন রয়েছে। সে খাবার আদৌ খাওয়ার যোগ্য কিনা, বিলোনোর আগে রবিন হুড আর্মিরা চেখে দেখেন।
নেই কোনো রিভলভিং চেয়ার, নেই এসি, নেই ঝাঁ চকচকে চার দেওয়ালের অফিস ঘর। আছে শুধু সেচ্ছাসেবকদের হোয়াটস্যাপ গ্রুপ। যেখানে পরিকল্পনা করা হয় রবিবারের। প্রত্যেক রবিবার ঘড়ির কাঁটা মেনে ঠিক বিকেল ৪.৩০-তে জমায়েত হয় সল্টলেক বৈশাখী মোড়ে। সেখান থেকে চারটে বস্তি এলাকায় খাবার বিলোয় তারা। এখন অবধি শহরে ১০টি বস্তি এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছে খাবার। খাবারের মেনুতে কখনও কেক তো কখনও খিচুড়ি। শিশুগুলোর আবদার মেনে কখনও চাউমিনও নিয়ে আসে রবিন হুড আর্মির সদস্যরা।
Food for poor hungry street children in Kolkata
এখন প্রশ্ন, এত খাবার জোগাড় করে কোথা থেকে বা ওই পরিমাণ খাবার কুলোবে অতজনের তা আগাম ঠিক করে কিভাবে তারা? প্রথমে তারা বস্তি গুলো ঘুরে দেখে, সেই চাহিদা মত খাবার নিয়ে যায় তারা। সেসময় জেনেও আসে সেই সপ্তাহে তাদের খাওয়ার ইচ্ছার তালিকাও।
২০১৪ সাল থেকে কলকাতা শহরে পথ চলা শুরু রবিন হূড আর্মিদের। তবে শুধু কলকাতা নয়, দেশ ব্যাপী ৪৪ টা শহরে রয়েছে এদের দলের সদস্যরা। প্রসঙ্গত, এদেরও রয়েছে বার্ষিক টার্গেড। অবাক হলেন ? কোনো টাকার অঙ্কের হিসাব নয়, কয়েক মিলিয়ান মানুষের মুখে খাবার তুলে দিয়ে তাদের হাসি দেখার টার্গেড সেট করেছে রবিন হূড আরেমির সদস্যরা।
দরিদ্রসীমার নিচের তলার মানুষগুলো জানিয়েছেন, আমাদের গলির সামনে গাড়ি এসে দাড়ালে বাচ্চারা দৌড়ে যায়, তারা জানে আজ ভালো খাবারের স্বাদ পাবো। আমরা খুব খুশি হই ওরা এলে। যা খাবার দেয়, একবেলা আমাদের দিব্য চলে যায়।
কি ভাবছেন ? আপনিও যোগ দেবেন রবিন হূড আর্মি দলে। তাহলে মনে রাখবেন কিছু পাওয়ার আশায় নয়, দেওয়ার ইচ্ছাকে সান দিতে হবে। আট থেকে আশি সবাই সেই দলে যোগ দিতে পারবেন।