চারিদিকে এখন শুধুই ডেঙ্গুর খবর। দিনের পর দিন এই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। এবং সেই সঙ্গেই দেখা দিচ্ছে আরও নতুন রোগের সূত্রপাত। এমনিও করোনা নতুন স্ট্রেন নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই। আর ডেঙ্গু কিন্তু অনেকদিন ধরেই শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই কাবু করে তুলছে।
ডেঙ্গুর সেরকমভাবে কোনও চিকিৎসা নেই বলেই এর বাড়বাড়ন্ত মারাত্মক। শুধুই খাবার এবং নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের ওপর সীমাবদ্ধ এর চিকিৎসা। এমনিতেও ডেঙ্গু মারণ রোগের আওতায়। এতে প্রাণ গেছে বহু মানুষের। কিন্তু ডেঙ্গু পরবর্তীতে 'ডেঙ্গু শক সিনড্রোম' কিন্তু ভীষণ সমস্যা দায়ক। এতে মানুষ নিজে থেকে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে থাকে। এমনিতেও রক্তের প্লেটলেট কমতে থাকলে মানুষের নানা ধরনের শারীরিক অবনতি দেখা যায়।
তবে ডেঙ্গু পরবর্তীতে শরীর কিন্তু বেজায় দুর্বল থাকে। এবং এর সঙ্গেই আরও নানা ধরনের অসুবিধে দিনের পর দিন পরিলক্ষিত হতে থাকে। এমনিতেও এখন কোভিড ১৯ এর প্রভাবে যেকোনও রোগের মাত্রাই বেশি। এবং সেই কারণেই সারতে বেশ সময় নিচ্ছে। অনেকের মধ্যেই এই ধরনের লক্ষণ মেলে আবার অনেকেই এমন কিছুই ফেস করেন না।
প্রথম, শরীর ভীষণভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। কারণ ডেঙ্গুর মূল লক্ষণ হল প্রায় ১০২ থেকে ১০৪° জ্বর। এবং এমন জ্বরে শরীর নিস্তেজ থাকা স্বাভাবিক। তার মধ্যেই রক্তের প্লেটলেট কমে যায় বলেই রক্তপ্রবাহে দূষিত পদার্থ সঞ্চয় হতে থাকে এবং সেই থেকেও সমস্যা দেখা দিতে পারে। শরীরের প্রদাহ এতই বেশি থাকে যে উঠে বসার মত ক্ষমতা থাকে না। এবং রোগের সঙ্গে লড়াই করতে করতে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাঙতে ভাঙতে একেবারেই শূন্য হয়ে যায়। ফলেই শক্তি সঞ্চয় করতে অনেকদিন সময় লাগে।
দ্বিতীয়, ডেঙ্গুর পরে চুল পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। বেশিরভাগ মানুষই এর সম্মুখীন হন। ফলেই মন খারাপে হওয়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। অন্তত ডেঙ্গু থেকে মুক্তি পাওয়ার দুমাস পর্যন্ত চুল উঠতে পারে। এমনকি অনেকের ক্ষেত্রে আলোপেশিয়ার সমস্যাও দেখা যায়।
তৃতীয়, অনেকসময় দেখা যায় ডেঙ্গু পরবর্তী সময়ে ঘাড়ে ব্যথা, মাথায় যন্ত্রণা এবং পেশীতে মাঝেমধ্যেই ব্যথা অনুভব হচ্ছে। জ্বর কমে গেলেও এটি বেশ কিছুদিন স্থায়ী থাকে। এবং প্রদাহ যেহেতু বেড়ে যায় তাই এই ব্যথা বেদনার আকারও বেড়ে যায়। তাই এর থেকেও কষ্ট পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
চতুর্থ, খিদে কমে যাওয়া এবং গা বমি ভাব। ডেঙ্গুর আসল ওষুধ হল রস কিংবা ফ্লুইড জাতীয় খাবার। এবং রোগের কারণেই যেহেতু ইমিউনিটি কমে যায় তাই তার সঙ্গে মিলিয়ে খাবার ইচ্ছেই কমে যায়। এবং কোনও কিছুর গন্ধ নাকে এলেও বমি পাওয়া খুব স্বাভাবিক। বেশিমাত্রায় শরীর দুর্বল থাকলে খাবার খাওয়ার ইচ্ছেও চলে যায়।
পঞ্চম, ত্বক ভীষণ মাত্রায় শুষ্ক হয়ে যাওয়া এটির পরবর্তী লক্ষণ। অনেকেই বলেন এর সঙ্গেও স্কিনে ফুসকুড়ি এমনকি সাদা প্যাচ পরে যায়। তবে এগুলি নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ আপনাকে উপকার দেবে।
ষষ্ঠ, চোখের দেখার ক্ষেত্রে অনেকসময় ঝাপসা অনুভূত হয়। তাই চোখে দেখতে সমস্যা হলে অবশ্যই পরীক্ষা করান।
সপ্তম, ওজন হঠাৎ করেই কমে যায়। এবং বলে ডেঙ্গু অভ্যন্তরীণ চেহারা খারাপ করে দেয়। সঙ্গেই চোখে মুখে তার ছাপ ফেলে দেয়।
সুতরাং, ডেঙ্গু পরবর্তীতে নিজেকে ভীষণ যত্নে রাখা আবশ্যিক। নয়তো সুস্থ হতে বেশ সময় লাগবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন