উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশারকে বলা হয় ‘সাইলেন্ট কিলার’। অনেকের ক্ষেত্রে এই রোগ খুব সহজে ধরা যায় না। আবার ধরা পড়ার পর এর সঠিক চিকিৎসা না হলে বা প্রেশার নিয়ন্ত্রণে না থাকলে তা অনেক রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইদানিং দেখা যাচ্ছে শিশুদের মধ্যেও অনেকসময় উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বারাসাতের বাসিন্দা স্নেহা দত্ত। বয়স মাত্র ১৫। হটাৎ করেই একদিন ঘুমের মধ্যেই বুক ধড়পড়ানি। সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করতেই হাঁফিয়ে যাচ্ছে। প্রথমে সেভাবে আমল না দিলেও সমস্যা বাড়লে বাধ্য হয়ে পরিবারের সঙ্গে যান চিকিৎসকের কাছে। সব দেখে শুনে স্নেহার পরিবার তো থ!
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন তিনি। ডাক্তারের পরামর্শে এখন নিয়ম করেই সকালে এবং রাত্রে ওষুধ খেয়ে কিছুটা স্বাভাবিক রয়েছেন তিনি। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে ভালো উপায় হল জীবনযাত্রা বা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ বা ওষুধ গ্রহণই এর একমাত্র চিকিৎসা নয়, পাশাপাশি লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করা কথাও বলেছেন চিকিৎসকরা। উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় কী করবেন-
১.অতিরিক্ত ওজন নিয়ন্ত্রণ করে গ্রহণযোগ্য ওজন বজায় রাখা।
২.খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা।
৩.নিয়মিত ব্যায়াম করা।
৪.রাতে সঠিকভাবে ঘুমানো।
৫.অতিরিক্ত মানসিক দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা।
৬.ধূমপান থেকে বিরত থাকা। মদ্যপান এড়িয়ে চলা
পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে চর্বিজাতীয় খাবার অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত ফাস্ট ফুড এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়ছেন চিকিৎসকরা। পটাশিয়ামযুক্ত খাবার উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য অনেক ম্যাজিকের মত কাজ করেন। প্রোটিনজাতীয় খাবার উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে একটু হিসাব করে খেতে হয়।সেই সঙ্গে খাবারের পাতে কাঁচা নুন এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
শিশুদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ে কী বলছেন বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরী-
অনেকে ভাবেন অল্প বয়সে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে না এমন ধারণা এড়িয়ে চলায় ভাল। আজকাল অনেক শিশুদের মধ্যেও উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনেকে হয়ত সেটা বুঝতে পারছেন না। তাই সময় মত ধরাও পড়ছে না।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ-
১.বংশগত কিডনি রোগ, কিডনির সমস্যা উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে।
২.হরমোনজনিত সমস্যার কারণেও বাচ্চাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
৩.সাধারণত অতিরিক্ত ওজন এবং বংশগত কারণে বাচ্চাদের উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে।
৪.এক জায়গায় অনেকক্ষণ বসে থাকা, খেলা ধুলা না করা, স্থূলতাও অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ রক্ত চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
৫.স্ট্রেস/মানসিক চাপ/দুশ্চিন্তা উচ্চ রক্তচাপের অন্যতম প্রধান কারণ।
কী করে বুঝবেন আপনার বাচ্চা উচ্চ রক্ত চাপে আক্রান্ত?
১.বাচ্চার মাথাব্যথা, ঘাড় ব্যথা থাকতে পারে।
২.বেশি ঘাম হওয়া, বুক ধড়ফড় করা, চোখে ঝাপসা দেখা এই সমস্যাগুলো হতে পারে।
লক্ষণগুলি দেখলে কী করবেন?
১.প্রথমেই আপনার ডাক্তারবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করুন। বাচ্চার ব্লাড প্রেশার চেক করুন।
২.যদি দেখেন আপনার শিশুর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাহলে ডাক্তার বাবুর পরামর্শ মেনে চলুন।
৩.মাথায় রাখবেন নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম এবং আউটডোর গেমসের ব্যবস্থা করতে হবে। বাচ্চাকে ঘরে তৈরি টাটকা খাবার খাওয়াতে হবে, বাইরের ফাস্টফুড একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত নুন খাওয়া যাবে না।
৪.স্ট্রেস এড়িয়ে চলতে হবে। উচ্চ রক্তচাপের সেকেন্ডারি কারণ যেমন কিডনি, হৃৎপিণ্ডের সমস্যা, হরমোনাল সমস্যা থাকলে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শমতো চিকিৎসা করাতে হবে। অতিরিক্ত মাখন, তেলযুক্ত খাবার যেমন কেক, পেস্ট্রি, পরোটা, লুচি, আইসক্রিম ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। ডিমের কুসুম, খাসির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে।