প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। নামটা ভুলিনি হয়তো আমরা। কিন্তু কেন মনে রাখতে হতো, সেসব বিস্মৃত হয়েছি বোধহয়। চট্টগ্রামে (অধুনা বাংলাদেশ) বড় হওয়া প্রীতিলতা ছাত্রী হিসেবে ছিল বেশ চোখে পড়ার মতোই। ছাত্রাবস্থাতেই বিপ্লবী সংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই জড়িয়ে পড়া ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে। এরকমই এক মহিলা বিপ্লবী ছিলেন লীলা নাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া। লীলা ছিলেন সুভাষ চন্দ্রের খুব কাছের। পরে তিনিই তৈরি করেন দীপালি সংঘ।
উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় পড়তে এলেন প্রীতিলতা। দর্শন নিয়ে ভর্তি হলেন বেথুন কলেজে। কলকাতায় তাঁর সঙ্গে পরিচয় হল সূর্য সেনের। প্রীতিলতা ডাকতেন 'মাস্টার দা' বলে। এভাবেই সূর্য সেনের দলে যোগ দেওয়া তাঁর। গত শতাব্দীর তিনের দশকে তখন প্রীতির যোগ দেওয়া নিয়ে আপত্তিও এসেছিল একাধিক সদস্যের কাছ থেকে।
আরও পড়ুন, দেশের জন্য প্রাণ দিয়েও বিস্মৃত সব বীরাঙ্গনারা
১৯৩০ এর চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় প্রীতিলতার বয়স কুড়ি। সূর্য সেন, গণেশ ঘোষ, লোকনাথ বল, অম্বিকা চক্রবর্তী, আনন্দ প্রসাদ গুপ্ত, ত্রিপুরা সেন, কল্পনা দত্ত, হিমাংশু সেন, বিনোদ বিহারী চৌধুরী, সুবোধ রায় এবং মনোরঞ্জন ভট্টাচার্যের সঙ্গে প্রীতিলতা এবং দলের অন্যান্যরা ঠিক করলেন ব্রিটিশদের অস্ত্রাগার লুট করবেন তাঁরা, টেলিফোন আর টেলিগ্রাফ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেবেন। অস্ত্রাগার লুট করতে যদিও সফল হননি তাঁরা, তবে টেলিফোন আর টেলিগ্রাফের সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা গেছিল।
দলের অনেকেই গ্রেফতার হলেন। প্রীতিলতা আর দলের অন্য কয়েকজন সদস্য পালাতে সফল হলেন। মাস পাঁচেক পর সুর্য সেনের ভাবনা মতোই পাহারতলীর ইওরোপিয়ান ক্লাব হামলার পরিকল্পনা ছিল। সেই দলের প্রধান ছিলেন প্রীতিলতা। ইওরোপিয়ান ক্লাবের বাইরে তখন গোটা গোটা অক্ষরে লেখা থাকত "ডগস অ্যান্ড ইন্ডিয়ান্স আর নট অ্যালাউড"।
প্রীতিলতার নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল শিখে নিল কীভাবে অস্ত্র চালাতে হয়, কী ভাবে প্রয়োজন পড়লে গিলে নিতে হয় পটাশিয়াম সায়ানাইড। ১৯৩২ এর ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে হামলা হল ইওরোপিয়ান ক্লাবে। একাধিক সদস্য জখম হলেন হামলায়। হামলাকারীদের উদ্দেশে চলল পুলিশের গুলি। প্রীতিলতা গুলি লাগার পরেও বেঁচেছিলেন। ব্রিটিশের হাতে প্রাণ দেওয়া লজ্জার, এই মনে করে ২১ বছরের তরুণী প্রীতিলতা খেয়ে ফেললেন পটাশিয়াম সায়ানাইড।