চিৎপুরের এক বাংলা মিডিয়ামের ছাত্রী আমি। মর্নিং স্কুল, রাস্তা ঘাট দোকানপাঠ দেখতে দেখতে বাবার কোলে চেপে পৌঁছে যেতাম স্কুলে, যেদিন থেকে ডে সেকশন হল দেখলাম, আমায় স্কুল নিয়ে যাওয়ার রাস্তাটাই বদলে ফেলল বাবা। একই ‘ইস্কুল’, এক ‘দিদিমনি’ তবে হঠাৎ রাস্তা বদলালো কেন জিজ্ঞাসা করাতে বাবা বলেছিল, অন্য় রাস্তা দিয়ে গেলে নাকি তাড়াতাড়ি স্কুলে পৌঁছনো যাবে। অনেক পরে বুঝেছিলাম ওখানে ওরা দাঁড়ায় বলে ভদ্র সমাজ ওদিক দিয়ে যায় না। চিৎপুরে এক বন্ধুর বাড়িতে প্রাইভেট টিউশন পড়তে যেতাম রোজ সন্ধেবেলা। কাকিমার কড়া নিষেধ ছিল ‘ছাদের ওদিকে যাবি না’। এসব বিধি নিষেধেও ১৫ বছরের যাতায়াতে রাস্তাটা আর ওই মানুষগুলোর সঙ্গে বেশ অভ্য়স্ত ছিলাম আমি। এরপর কলেজের অ্যাসেম্বলিতে যেদিন বলেছিলাম শোভাবাজারে থাকি, হো হো করে হেঁসে উঠেছিল গোটা ক্লাস। তারপর একদিন খেয়াল করেছিলাম ‘কোথায় থাকি’র উত্তরে শোভাবাজারের বদলে শ্য়ামবাজার বা বাগবাজার বলতে শুরু করেছি। আসলে আমি মানতে পারিনি অবনী চতুর্বেদীর যুগে দাঁড়িয়েও একদল সভ্য সমাজের কাছে শোভাবাজার মানেই সোনাগাছি, লাইন দিয়ে দাড়িয়ে থাকা বাড়তি মেদওয়ালা মেয়েগুলো, স্যাঁত স্যাঁতে ঘর, লাল-নীল চড়া আলো, মদের গন্ধ আর অশ্রাব্য় গালিগালাজ। যাঁদের ভ্য়ালেন্টাইনস ডে নেই, শিবরাত্রিরের উপোস নেই, স্বামী-সংসারেরও বালাই নেই। জি এস টি বা বাজেটে লিপস্টিক পাউডারের দাম বাড়লে যাঁদের মাথায় বাজ পরে, এনজিও-দের ভিড় টপকে আর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার চাপে যাদের আদৌ কোনও লাভ হয় না, বাবু আর প্রেমিকে তালগোল পাকিয়ে তাঁরাও মা হয়েছেন। খুদেগুলোকে নিয়ে ওঁরাও স্বপ্ন দেখেন। কেউ ডাক্তার হতে চায় বা কেউ শিক্ষিকা। আসলে চকলা ওঠা দেওয়ালেও স্বপ্ন দেখায় ছেদ পরে না কোথাও। তাই ওদের স্বপ্নের উড়ানকে আরও খানিকটা রঙীন করল এশিয়ান পেইন্টস। রঙের মরসুমে ওরাও আর রঙহীন নয়। সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ওদের থাকার জায়গা, ‘প্রোজেক্ট সোনাগাছি’। শহরের নামজাদা চিত্রশিল্পীরাই হাতের জাদুতে সাজিয়েছে ওদের বাড়ি। কাজ শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগেই।
ছবি- ইনস্টাগ্রাম
ছবি- ইনস্টাগ্রাম
ছবি- ইনস্টাগ্রাম
ছবি- ইনস্টাগ্রাম
ছবি- ইনস্টাগ্রাম