Advertisment

দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে দু'চাকায় অক্ষয়যাত্রা

পকেটে হাজার দুয়েক টাকা নিয়ে বছর বাইশের অক্ষয় একদিন বেরিয়ে পড়েছিল সারা ভারত ঘুরবে বলে। বছরভর কেটেছে চাকায় চাকায়। ট্যাঁকের সম্বল খরচা হয়নি একটুও।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

পথ চিনতে নেমে অক্ষয়

পকেটে হাজার দুয়েক টাকা নিয়ে বছর বাইশের অক্ষয় একদিন বেরিয়ে পড়েছিল সারা ভারত ঘুরবে বলে। তারপর কেটে গিয়েছে আস্ত একটা বছর। দু'চাকাকে সঙ্গী করে সত্যিই প্রায় গোটা দেশটাই ঘুরে ফেলেছে অক্ষয়। টানা ৩৯০ দিন ধরে ২৭ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছে পুরুলিয়ার অক্ষয় ভগত। ভারত সফরে তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও যেন শিক্ষার আলো পোঁছয়, সে বিষয়েও মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করে গিয়েছে অক্ষয়। ঘরে ফেরার পথ ফুরোয়নি এখনও, তবে বাংলায় ফিরেছে সম্প্রতি। পকেটে এখনও সেই দু'হাজারের নোট। বছরভর কেটেছে চাকায় চাকায়। ট্যাঁকের সম্বল খরচা হয়নি একটুও।

Advertisment

ঘর ছেড়েছিল ২০১৮ সালের ৫ মার্চ। তারপর থেকে পথই হয়ে উঠেছে ঘর। মন্দির, গুরুদ্বার, আশ্রম, কখনওবা ধর্মশালা, ঠিকানা বদলেছে প্রতি রাতে। জাত ধর্মের তোয়াক্কা না করে মানুষ আপন করেছে অক্ষয়কে। দুর্গম অঞ্চলে অবশ্যম্ভাবী বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন সম্পূর্ণ অচেনা কয়েকটা মুখ। নিমেষে বদলেছে 'ঘর'-এর সংজ্ঞা।

publive-image

পুরুলিয়ার বুরদা গ্রামের বাসিন্দা অক্ষয়। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া। বাড়ির দুই দিদির বিয়ে দিতে গিয়ে একরকম নিঃস্ব হয়ে যান অক্ষয়ের বাবা। অগত্যা মাধ্যমিকের পরই থেমে যায় ছেলের প্রথাগত শিক্ষা। ডিগ্রি পাওয়া হয়নি আর কোনও দিনই। তবে জানার ইচ্ছে থেমে থাকেনি এতটুকু। লাইব্রেরিতে গিয়ে পছন্দের নানা বিষয় নিয়েই পড়াশোনা করে গেছে অক্ষয়। সংসার টানতে কখনও কাগজ বিলি করেছে, দুধ বিক্রি করেছে। পড়ার এবং পড়ানোর নেশা এতটাই পেয়ে বসেছিল অক্ষয়কে, বেরিয়ে পড়ার আগে নিজের বাড়িতেই দীর্ঘদিন গ্রামের কচিকাঁচাদের নিখরচায় পড়িয়েছে নিষ্ঠা নিয়ে। ভবিষ্যতেও সেটি চালিয়ে যেতে চায় এই তরুণ।

"সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে দেশের মধ্যে বাল্যবিবাহের হার সবচেয়ে বেশি পুরুলিয়ায়। যতগুলো ঘটনা নথিভুক্ত হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি সরকারি হিসাবের বাইরেই থেকে যায়। আমার নিজের চোখে দেখা এসব। কত অল্পবয়সি মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে দেবার চেষ্টা করেছি। এটার জন্য শিক্ষার আলোয় আসা খুব দরকার গ্রামের মানুষের", জানাল অক্ষয়।

publive-image

দেশের ২২টি রাজ্য চষে ফেলেছে অক্ষয়। উত্তরপূর্ব ভারতের সাতটা রাজ্য শুধু বাকি থেকে গিয়েছে। বছর ঘুরতে শুধু বয়সই বাড়েনি, উপচে গিয়েছে অভিজ্ঞতার ডালি, সময় পেলেই আবার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়বে। বাহনটিকে সঙ্গে নিয়ে দুনিয়া দর্শনের স্বপ্ন দেখে অক্ষয়, তবে তার আগে নিজের গ্রামের জন্য কিছু করতে চায় সে। পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর দিকে বাড়িয়ে দিতে চায় ভরসার হাত। অক্ষয় হোক ওর দিনবদলের স্বপ্ন।

Advertisment