বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকীতে আজ (৯ মে, ২০২৩) শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছেন তাঁর অসংখ্য অনুরাগী। তিনি জন্মেছিলেন ৭ মে, ১৮৬১ সালে। বাংলায় দিনটি ছিল ২৫ বৈশাখ। তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যাঁর ব্যাপ্তি সর্বত্র। জীবনের প্রতিটি কোণে যেন তিনি ছড়িয়ে আছেন। বিশ্বকবি হলেও শুধু কাব্যের জগতেই তিনি আটকে ছিলেন না। সাহিত্যিক, সুরকার, গীতিকার, চিত্রশিল্পী, দার্শনিক- সব ভূমিকাতেই তিনি যেন পূর্ণ।
তাঁর ওপর প্রকাশিত বিভিন্ন ছবিতে কবিকে তেমন একটা হাসতে দেখা না-গেলেও, রবীন্দ্র গবেষকরা কিন্তু বলেন যে কবিগুরু মোটেও রাশভারী মানুষ ছিলেন না। বরং, তিনি ছিলেন বেশ রসিক। বেশ কিছু ঘটনা যার উদাহরণ। শোনা যায়, একবার রবীন্দ্রনাথ এবং গান্ধীজি একসঙ্গে খেতে বসেছিলেন। গান্ধীজি লুচি খেতে মোটেও ভালোবাসতেন না। তাই গান্ধীজিকে ওটস খেতে দেওয়া হয়েছিল। আর, কবিগুরু নিজে গরম লুচি খাচ্ছিলেন। তাই দেখে নাকি গান্ধীজি বলেছিলেন, 'গুরুদেব তুমি জান না, বিষ খাচ্ছ।' রবীন্দ্রনাথ জবাব দিয়েছিলেন, 'বিষ হতে পারে। কিন্তু, এর অ্যাকশন খুব ধীরে। আমি ৬০ বছর ধরে এই বিষ খাচ্ছি।'
শোনা যায়, কবিগুরুর অভ্যেস ছিল, যখনই তিনি কোনও উপন্যাস লিখতেন, তা শান্তিনিকেতনে গুণীজন সমাবেশে পড়ে শোনাতেন। তাঁর সেই গুণীজন সমাবেশের হামেশাই অঙ্গ হয়ে উঠতেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। একবার নাকি আসরের বাইরে জুতো খুলে আসার জন্য শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জুতো চুরি হয়ে গিয়েছিল। সেই শিক্ষা থেকে পরেরবার শরৎচন্দ্র নতুন দুটো জুতো কিনে তা কাগজে মুড়ে বগলে করে আসরে প্রবেশ করেছিলেন। যা দেখে কবিগুরু বলে উঠেছিলেন, 'শরৎ তোমার বগলে কি ওটা, পাদুকাপুরাণ?' কবিগুরুর মুখে সেই কথা শুনে নাকি সবাই হাসতে শুরু করেছিল।
আরও পড়ুন- চাণক্য এমন কথা বলে গিয়েছেন, যা আজ বাংলার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে
জীবনের শেষদিকে রবীন্দ্রনাথ সামনের দিকে ঝুঁকে উপুড় হয়ে লিখতেন। একদিন তাঁকে এভাবে উপুড় হয়ে লিখতে দেখে তাঁর এক শুভাকাঙ্ক্ষী প্রশ্ন করেছিলেন, 'আপনার নিশ্চয়ই এভাবে উপুড় হয়ে লিখতে কষ্ট হচ্ছে? বাজারে এখন বহু চেয়ার আছে। যেগুলোতে আপনি হেলান দিয়ে আয়েশের সঙ্গে লিখতে পারেন। তেমন একটা আনিয়ে নিলেই তো পারেন।' কিছুক্ষণ সেই ব্যক্তির দিকে তাকিয়ে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, 'তা তো পারি। এখন উপুড় হয়ে না-লিখলে কী আর লেখা বের হয়? পাত্রের জল যখন কমে তলানিতে ঠেকে, তাকে তো উপুড় করতেই হয়।' অন্তরে চিররসে সমৃদ্ধ এই মহামানব ৭ আগস্ট, ১৯৪১ সালে প্রয়াত হয়েছিলেন।