scorecardresearch

বাংলার জাগ্রত মন্দির, যেখানে ক্লেশহীনভাবে ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ করেন রাখালরাজা

আজও দূর-দূরান্ত থেকে এই মন্দিরে ভক্তরা ভিড় করেন।

Rakhal Raja Temple

সাধনার ভূমি বাংলায় শৈব এবং শাক্ত সাধনার সঙ্গে বৈষ্ণব সাধনাও ফুল ও ফলে বিকশিত হয়েছিল। শ্রীচৈতন্যদেব তো ছিলেনই। তিনি ছাড়াও এই বাংলায় কিন্তু, সিদ্ধ বৈষ্ণব সাধকের সংখ্যা নেহাত কম ছিল না। অথবা, এখনও আছে। তেমনই আছে জাগ্রত পীঠ। এরাজ্যেই (পশ্চিমবঙ্গ) এমন বহু বৈষ্ণব সিদ্ধপীঠ আছে, যেখানে ঈশ্বরিক লীলা কাহিনির পর কাহিনি বুনে গিয়েছে। এমনই এক সিদ্ধপীঠ হল পূর্ব বর্ধমানের কালনার রাখালরাজা মন্দির। যা রয়েছে কালনা ২ নম্বর ব্লকের বৈদ্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে।

এই মন্দির তৈরি হয়েছিল এক সিদ্ধ বৈষ্ণব পুরুষ রামকানু গোস্বামীর মাধ্যমে। কালাপাহাড়ের ভয়ে তিনি বিগ্রহ এবং পরিবার নিয়ে নদিয়া থেকে কালনায় পালিয়ে এসেছিলেন। জায়গাটা সেই সময়ে বন-জঙ্গলে ভরা ছিল। কথিত আছে, তিনি বাকসিদ্ধ ছিলেন। অজান্তে দেওয়া তাঁর অভিশাপে তিন দিনের মধ্যে মৃত্যু হয়েছিল তাঁর নিজেরই ছোট ছেলের। শোকে মগ্ন ওই সিদ্ধপুরুষ এতে সংসার ত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়ে বৃন্দাবনের পথে রওনা হয়েছিলেন। পথে তাঁকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বপ্নে দর্শন দেন।

কোন কাঠ দিয়ে কীভাবে তাঁর মূর্তি কে তৈরি করে দেবে, সব বলে দেন স্বপ্নাদেশে। সেই অনুযায়ী তৈরি হয় মূর্তি। স্বপ্নাদেশের নির্দেশমতোই বিগ্রহের অভিষেক করা হয়েছিল। সেই রীতি আজও কালনার এই মন্দিরে বজায় আছে। প্রতি মাঘী পূর্ণিমায় এখানে বিগ্রহের অভিষেক করা হয়। এই মন্দির রাখালরাজার মন্দির নামে পরিচিত হলেও, এখানে রয়েছে গোপীনাথের বিগ্রহও। যা গোস্বামীদের পারিবারিক বিগ্রহ। এর মধ্যে ছোট বিগ্রহটি নিজের প্রয়াত ছোট ছেলের নাম অনুযায়ী ওই সিদ্ধ বৈষ্ণব সাধক দেন ‘রাখালরাজা’।

পরবর্তী সময়ে এই মন্দিরের খ্যাতি বাড়তে থাকায় ব্রজপুরের দেবীগোপাল পাঁজা নামে এক ভক্ত বড় আকারে মন্দিরটি বানিয়ে দিয়েছেন। মন্দিরের নীচেই রয়েছে ওই বৈষ্ণব সিদ্ধপুরুষ রামকানু গোস্বামীর সমাধি। কথিত আছে, স্থানীয় জমিদার গোপালদাস দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে রাখা তাঁর ওই জঙ্গলে লোকজন নিয়ে আচমকা পরিদর্শনে আসেন। তিনি দেখতে পান, সেখানে বিনা অনুমতিতে তাঁর জঙ্গলে রামকানু গোস্বামী ও তাঁর স্ত্রী কুটীর ও মন্দির বানিয়ে পুজোপাঠ করছেন।

আরও পড়ুন- কোন্নগরের জাগ্রত দেবী শকুনতলা রক্ষাকালী, পূরণ করেন ভক্তদের মনস্কামনা

জমিদার নিজের পরিচয় দেওযার পর তাঁদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা করেছিলেন গোস্বামী দম্পতি। তাঁদের স্বল্প প্রসাদেই জমিদার ও তাঁর সঙ্গে থাকা বিপুলসংখ্যক লোকজনের পেট অলৌকিকভাবে ভরে গিয়েছিল। সেই অলৌকিক শক্তির পরিচয় পেয়ে জমিদার ওই গোটা গ্রামটিই গোস্বামী দম্পতিদের দিয়ে দেন। নিজের নাম অনুসারে ওই গ্রামের নাম দেন গোপালদাসপুর। কথিত আছে, এই মন্দিরে আজও ভগবানের কাছে যা প্রার্থনা করা হয়, সব মনস্কামনা পূরণ হয়।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Lifestyle news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Rakhal raja temple in gopaldaspur