Advertisment

Rakhsha Bandhan: বাংলা ছিল রাখীর আঁতুড়ঘর, আজ সে ব্যবসাতেও ভাঁটার টান

West Bengal Rakhi sale down in Raksha Bandhan 2018: দিন কয়েক আগে রাখীর নমুনা গিয়েছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে। তার মধ্যে থেকেই পছন্দ করে নিয়েছেন গোল আকৃতির একটি রাখী। যার মাঝে থাকবে বিশ্ব বাংলার লোগো 'ব'।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Rakhi Sale down in West Bengal:

ফাইল ছবি।

Raksha Bandhan 2019: রাখী ব্যবসায় সেই সুদিন আর নেই বাংলায়, দেখা দিয়েছে ভাঁটার টান। ভিন রাজ্যের কারিগররা রাখী তৈরিতে পারদর্শী হয়ে উঠছেন দিনে দিনে। সেই কারণে যেখানে এই পশ্চিমবঙ্গেই এককালে ঘরে ঘরে, মা-ঠাকুমারা তৈরি করতেন রাখী, সম্প্রতি ইতিহাসের পাতায় চলে গিয়েছে বাংলার রাখী।

Advertisment

পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে মেতে উঠেছিল বাংলা। এদিকে ইংরেজদের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাকে ভাগ করে বিদ্রোহের গতি রুদ্ধ করে দেওয়া। অতএব পাশ হয়ে গিয়েছিল বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব। তখন শ্রাবণ মাস। ইংরাজীর ১৬ আগস্ট। কাকতালীয় ভাবে সেটা ছিল রাখী পূর্ণিমার দিন। হিন্দু ঘরের মেয়েরা তাঁদের ভাই-এর হাতে রাখী পরাবেন। তবে এদিন অন্য় কিছু ভাবছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ। বিশ্বকবির উদ্য়োগে শুধু ভাই-বোনের নয়, রাখীবন্ধন হয়ে উঠল হিন্দু-মুসলিমের সম্প্রীতির উৎসব।

আরও পড়ুন: রবীন্দ্রনাথ ও রাখি বন্ধন

এক ধর্মের মানুষ ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে হাতে রাখী পরিয়ে দিয়েছিলেন যাঁর হাতে, তাঁর ধর্ম আলাদা। হাতে হাত রেখে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল এই প্রতীকী প্রতিবাদ। এক কবির ডাকে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারা বাংলা এক হয়েছিল সেদিন। সে সময় থেকে বাংলায় রাখী উৎসব হয়ে উঠল সর্বসাধারণের। বাংলায় সেই ধারা অব্যাহত এখনও। এই রাজ্যেই শুরু হয় রাখী নির্মাণ সংস্থা। মূলত যার ঘাঁটি রয়েছে কালনায়। তবে সেই রমরমিয়ে চলা দিগ্বিজয়ী ব্যবসার রোশনাই আজ আর নেই।

Rakhi Sale down in West Bengal: Rakhi Sale down in West Bengal: বাজার আজ অনেকটাই মন্দা

ডিজিটাল যুগ এবং নিম্নগামী বাজারে রাখীর নিচে ঢাকা পড়ে থাকা সুতোর মতোই, ক্রমশ আমরা হারিয়ে ফেলছি বন্ধনের ধারণা। তাই চার পাঁচটা রঙিন ডিজিটাল ছবিতেই দায়সারা ভাবে সেরে ফেলা হয় রাখীবন্ধন উৎসব। দোকানদারদের দাবি, বর্তমানের সোশ্যাল সাইট কোপ বসিয়েছে তাঁদের ব্যবসায়। এদিকে অনলাইনে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আপডেটেড কায়দায় বানানো রাখী। রাস্তায় বেড়িয়ে ভীড় ঠেলে, সময়ের অভাবে অনেকেই রাখী কিনে উঠতে পারেন না, অগত্যা তখন ভরসা ই-কমার্স সাইটগুলো, এক্ষেত্রে অনলাইনে ক্রেতার সংখ্যাও বেশি। ভিন রাজ্য থেকে প্রয়োজনে যারা মোটা অঙ্কের অর্ডার পাঠাতেন পশ্চিমবঙ্গে, তারা এখন হয় নিজেরা বানিয়ে নিচ্ছেন, নতুবা গ্রাহকরা অনলাইনে অর্ডার দিচ্ছেন রাখী। বাজারে যে রাখীর দাম গড়ে ৪০ টাকা, সে রাখী অনলাইন সাইটে বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা দামে।

আরও পড়ুন: রাখী পূর্ণিমার শুভেচ্ছা পাঠান আপনার প্রিয়জনদের

গত বছরের তুলনায় এ বছরের আয় কমেছে রাখী ব্যবসায়। এদিকে দিনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদল ঘটেছে রাখীর তৈরির। আগের মতো গোল বড় রাখী সেভাবে বিক্রি হয় না। স্টোন, বিডস, হালকা রাখীর প্রতি ঝোঁক বেশি ক্রেতাদের। আগের রাখী তৈরিতে কারিগরদের পারিশ্রমিক কম ছিল, যে সব জিনিস দিয়ে তৈরি হত, তার খরচও অনেক কম ছিল। 'আধুনিক' রাখী ব্র্যান্ডের কর্মকর্তা রাহুল সিংহ জানিয়েছেন, বর্তমানে অনেক ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা কম দামে রাখী তৈরির উপাদান কিনে নিয়ে গিয়ে নিজেরাই বানিয়ে নেন। অন্যদিকে জিএসটির প্রকোপও পড়েছে ব্যবসায়। রাখী বানাতে যেসব উপাদানের প্রয়োজন হয়, যেমন পুঁতি, স্টোন, সুতো, সব কিছুর ওপরই আলাদা আলাদা করে জিএসটি বসিয়েছে বর্তমান সরকার। এদিকে বিক্রির সময় রাখীতে কোনো জিএসটি থাকত না এতদিন। উপায় না দেখে অগত্যা বাড়াতে হয়েছে রাখীর দাম। আধুনিক রাখী কোম্পানির কর্মকর্তা বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন পলিসির জন্য আস্তে আস্তে বাংলা থেকে সরে যাচ্ছে রাখী ব্যবসা, গুজরাত মহারাষ্ট্রে স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে রাখীর ঘাটি।"

Rakhi Sale down in West Bengal: Rakhi Sale down in West Bengal: গত বছরের তুলনায় এ বছরের আয় কমেছে রাখী ব্যবসায়

বছরের এককালীন ব্যবসা রাখী বিক্রির। সারা বছর তার বিক্রি বন্ধ থাকে। তবে কাজ নয়। রাখী মেশিনে তৈরি হয় না। যাবতীয় রাখী তৈরি হয় হাতেই। যা সময়সাপেক্ষ কাজ। রাখীর ডিজাইন পিছু টাকা পান কারিগররা। কখনও রাখী পিছু পাঁচ টাকা, কখনও ১২ টাকা বা ১৫ টাকা অবধি আয় করে থাকেন তাঁরা। সারা বছরই রাখী তৈরির কাজ হয়। রাখীপূর্ণিমা চলে গেলে তার পরের মাস থেকেই শুরু হয়ে যায় আগামী বছরের কাজ।

আধুনিক রাখী ব্র্যান্ডের কর্মকর্তা রাহুলবাবুর কথায়, "আগে প্রধান মান্ডি ছিল কলকাতা শহর। কিন্তু এখানে কারিগরদের বেতন কম, তাই তারা ভিন রাজ্যে চলে গেছেন কাজের খোঁজে, যার ফলে শ্রমিক পাওয়া যায় না। এ ছাড়া এখান থেকে রাখী ভিন রাজ্যে রপ্তানি হলে সেই রাখীর দামও বেড়ে যায়, কিন্তু ওখানেই যদি রাখী তৈরি হয়, স্বভাবতই তার দাম অনেক কম থাকে যার ফলে ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি হয়।" তিনি আরও বলেন, বিদেশেও পাড়ি দিয়েছে রাখী। তাঁর সংস্থার কাছ থেকেই প্রায় হাজার দশেক রাখী ইতিমধ্যে পৌঁছেছে আমেরিকা এবং ইউরোপের কিছু শহরে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য শহরে আজও রপ্তানি করা হয় রাখী। তবে তাঁর দাবি, বিপুল হারে কমেছে পরিমাণ।

Rakhi Sale down in West Bengal: Rakhi Sale down in West Bengal: বছরের এককালীন ব্যবসা রাখী বিক্রির। সারা বছর তার বিক্রি বন্ধ থাকে।

সুখের কথা, বছর কয়েক আগে থেকে বর্তমান রাজ্য সরকারের দৌলতে অবশ্য এলাকাভিত্তিক ক্লাবগুলি রাখীবন্ধন উৎসবের আয়োজন করে থাকে। রাস্তায় চলা মানুষগুলোর হাতে বা আমন্ত্রিত সকলের হাতে রাখী পরিয়ে উদযাপন করে দিনটিকে। রাজনৈতিক মহল থেকে কয়েকশো রাখির অর্ডার দেওয়া হয়ে থাকে প্রত্যেক বছরই। নির্মাণ সংস্থার দাবি, বর্তমান সরকারের যাত্রাপথের শুরু থেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়ে থাকে। যার জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাখীবন্ধন উৎসবের মাস কয়েক আগেই চলে আসে অর্ডার। তবে সূত্রের খবর, এ বছর এই পথে পা বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারও। অর্ডার পাঠিয়েছে রাখীর। এদিকে শ্রী রাখী কোম্পানি থেকে দিন কয়েক আগে রাখীর নমুনা গিয়েছিল মমতা বন্দোপাধ্যায়ের কাছে। তার মধ্যে থেকেই পছন্দ করে নিয়েছেন গোল আকৃতির একটি রাখী। যার মাঝে থাকবে বিশ্ব বাংলার লোগো 'ব'। রাখী বন্ধন উৎসবের দিন দলের কর্মী ও অন্যান্যদের ওই রাখী পরিয়ে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী।

kolkata news
Advertisment