Raksha bandhan 2018: ‘‘অ্যাই দ্যাখ, আমারটা কত্ত ভাল হয়েছে’’, চুলে ঝুঁটি বাঁধা ওই খুদের মুখে একথা শুনেই পাশে বসা ‘রেনবো জেলি’ সিনেমার সেই ঘোঁতনের মতো খানিকটা চশমা পরা এক বালক প্রতিযোগিতার সুরে বলল, ‘‘আমারটা দেখ, বেস্ট হয়েছে’’...ছোট্ট ঘর, মেঝেতেই গোল করে বসে চলছে কাজ, দেখে মনে হবে যেন দক্ষযজ্ঞ চলছে। কচিকাঁচাদের পাশে যোগ্য সঙ্গত দিচ্ছেন বড়রাও।
ক’দিন বাদেই রাখীপূর্ণিমা। বাজারে হরেক রকম রাখীর পসরা সাজানো রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেসবের থেকেও বোধহয় নিজের হাতে বানানো জিনিসের প্রতিই অমোঘ আকর্ষণ থাকে। আর তা যদি কোনও মহৎ কাজে লাগে। মহৎ কাজ? হ্যাঁ, মহৎ কাজই তো, এদের হাতে বানানো রাখী শুধু যে পথচলতি মানুষদের হাতে শোভা পাবে তেমনটা নয় কিন্তু। রাখী পরানোর বদলে উপহার হিসেবে যে টাকা মিলবে, তা সরাসরি পৌঁছে যাবে কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। কোটি কোটি টাকা দিয়ে ইতিমধ্যেই কেরালার আর্থিক ভিতকে মজবুত করার ঘোষণা করা হয়েছে বিভিন্ন মহলে। এবার কলকাতার এই খুদেদের হাতও আর্থিক সাহায্য করে বানভাসি কেরালার হাত শক্ত করে ধরল, নেপথ্যে শ্যামবাজারের সংস্থা ‘সংবেদন’।
তবে ওরা আর চারপাঁচটা কচিকাঁচার দলে পড়ে না। কেরালায় প্রকৃতির ভয়াল রূপ এদের কেউ কেউ টিভির পর্দায় দেখতে পারেনি। কারণ, এদের চোখ থেকেও নেই। আবার কেউ কেউ টিভির পর্দায় কেরালার বানভাসি ছবি দেখে শিউরে উঠেছে। কারওবা আবার সেই বোধটুকুই নেই। রাখীপূর্ণিমা বলে কথা, তাই কার্যত যেন নাওয়া-খাওয়া ভুলে রাখি তৈরিতে ব্যস্ত দৃষ্টিহীন, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, মানসিক প্রতিবন্ধী খুদেরা। হ্যাঁ, এমন ভিন্ন চরিত্রের কচিকাঁচাদের হাতেই বানানো ফুটফুটে রাখীর মাধ্যমেই কেরালাবাসীর জন্য অর্থ পৌঁছে দেবে ‘সংবেদন’।
রাখি উৎসবের মাধ্যমে কেরালার জন্য আর্থিক অনুদান পৌঁছে দেবে কলকাতার সংস্থা ‘সংবেদন’ pic.twitter.com/WGgtklFJOz
— IE Bangla (@ieBangla) August 23, 2018
রাখীপূর্ণিমা উপলক্ষে প্রতিবছরই রাখী উৎসব করে থাকে এই সংস্থা। এবার এদের রাখী উৎসবের নাম দেওয়া হয়েছে ‘প্রাণের জন্য রাখী’। এমন নামকরণ কেন? জবাবে ওই সংস্থার মূল উদ্যোক্তা শমিত সাহা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন,‘‘কেরালায় ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। ফলে আনন্দোৎসবটা যদি অন্যরকম ভাবে করি, তাহলে কিছুটা হলেও কেরালার দুর্গতদের কষ্ট নিবারণ করতে পারব। তাই এবার আমাদের রাখী উৎসবের নাম দিয়েছে ‘প্রাণের জন্য রাখী’। প্রতিবছরই রাখী পরালে উপহার হিসেবে অনেক কিছু দেন সবাই। তাই এবার আমরা ভেবেছি রাখী পরালে উপহার হিসেবে যে টাকা উঠে আসবে তা কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করব।’’
আরও পড়ুন, রবীন্দ্রনাথ ও রাখী বন্ধন: ফিরে দেখা ইতিহাস
তবে শুধু কেরালার জন্যই নয়, এর আগেও এ রাজ্যে আয়লার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, গুজরাতে ভূমিকম্প, ২০০৪ সালে সুনামিতে দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়েছে সংবেদন। রাখিপূর্ণিমার আগেই আগামী শনিবার শ্যাম পার্কে দুপুরে বিশেষ রাখি উৎসবের আয়োজন করেছেন শমিতরা। প্রায় ৫০০ রাখির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানেই রাখা থাকবে একটি বাক্স। যে বাক্সে কেরালার জন্য আর্থিক অনুদান সংগ্রহ করা হবে।