Advertisment

মহান যোগীপুরুষ রাম ঠাকুর, আজও অসংখ্য ভক্তের আশ্রয়

প্রাণভরে ডাকলেই যিনি হয়ে ওঠেন বিপদতারণ।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Ram Thakur

ভারতে উচ্চকোটির সাধক ও যোগীদের অভাব কোনওকালেই ছিল না। তার মধ্যে পরবর্তী সময়ে যে সাধকরা ভক্তদের থেকে বিশেষ সম্মান লাভ করেছেন, তাঁদের অন্যতম রামঠাকুর। আজও অগণিত ভক্ত ও শিষ্যদের কাছে তিনি পরম আশ্রয়।

Advertisment

রামঠাকুরের পারিবারিক নাম ছিল রামচন্দ্র চক্রবর্তী। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৮৬০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আদিবাড়ি ছিল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার ডিঙ্গামানিক গ্রামে। বাবার নাম রাধামাধব চক্রবর্তী। আর, মায়ের নাম কমলাদেবী। রামঠাকুরের বড়দার নাম ছিল কালীকুমার। এরপর ছিলেন দিদি কাশীমণি দেবী। মেজদার নাম ছিল জগবন্ধু। আর, রামঠাকুর নিজে ছিলেন যমজ সন্তান। তাঁর যমজ অপর ভাইয়ের নাম লক্ষ্মণ।

রামঠাকুরের বাবা ছিলেন তন্ত্রসাধক। তাঁর বাবার গুরুদেব ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় ন্যায়পঞ্চানন। মাত্র আট বছর বয়সে রামঠাকুর তাঁর বাবাকে হারান। এর কয়েক দিনের ব্যবধানে তাঁর বাবার গুরুদেবেরও মৃত্যু হয়। এর পর এক অক্ষয় তৃতীয়া তিথিতে রামঠাকুরের বাবার গুরুদেব তাঁকে স্বপ্নে দীক্ষা দেন। গ্রামে পাঠশালায় শিক্ষালাভ করা রামঠাকুর এরপর ১৮৭২ খ্রিস্টাব্দে গৃহত্যাগী হন। কামাখ্যায় সাধনার সময় তিনি এক যোগীপুরুষের সাহচর্য লাভ করেন। এরপর কখনও হিমালয়ের কোলে বিভিন্ন জায়গায় তিনি সাধনা করেন। সাধকদের সেবা করে, তাঁর কৃপালাভও করেন।

এরপর গুরুর স্বপ্নাদেশেই বাড়ি ফেরেন মায়ের সেবা করতে। নোয়াখালির এক ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে রান্না করার কাজ নিয়েছিলেন। সকলকে অসাধারণ রান্না করে খাওয়াতেন। কিন্তু, নিজে খেতেন সামান্য দুধ আর এক বা দুই টুকরো ফল। কথিত আছে, এরপর রামঠাকুরের দৈব প্রভাবে কর্মদাতা ইঞ্জিনিয়ার বুঝতে পারেন, তাঁর পাচক একজন সিদ্ধপুরুষ। সেটা বুঝতে পারার পর তিনি আর রামঠাকুরকে পাচকের কাজ করতে দেননি।

এরপর রামঠাকুর ফেনি শহরে এক ওভারসিয়রের অধীনে সরকারি কাজে নিযুক্ত হন। সেই সময় বহু মহিলা নানা কর্মসূত্রে ফেনি শহরে আসতেন। রামঠাকুর তাঁদের পরম মমতায় রান্না করে খাওয়াতেন। অসুস্থ হলে সেবা করতেন। যা দেখে সেই সময়কার মহকুমা হাকিম কবি নবীনচন্দ্র সেন তাঁর অশেষ প্রশংসা করেছেন। ‘আমার জীবন’ বইয়ের চতুর্থ ভাগে ‘প্রচারক না প্রবঞ্চক’ অংশে রামঠাকুরের বহু অলৌকিক কর্মকাণ্ডেরও উল্লেখ করেছেন নবীনচন্দ্র সেন। শুধু নবীনচন্দ্র সেন নয়। রামঠাকুরের ভক্তদের মধ্যে ছিলেন যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত-সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামঠাকুরের প্রশংসা করে যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্তকে বলেছিলেন, 'সমুদ্রেরও একটা কূল আছে। কিন্তু, তোমার ঠাকুরের কোনও কূল-কিনারা নেই।'

আরও পড়ুন- শ্রীগুরু সঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা দুর্গাপ্রসন্ন পরমহংস, ভারতের অধ্যাত্মজগতে অন্যতম নামী সাধক

তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা আর সেবামূলক মনোভাবের কারণে ভক্ত ও শিষ্যের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে। তাঁদের আবদারে তিনি আশ্রম তৈরির নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশে ১৯৩০ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামে কৈবল্যধাম আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি, ১৯৪২ সালে কলকাতার যাদবপুরেও তৈরি হয় কৈবল্যধাম আশ্রম। পাশাপাশি, ১৯৪৩ সালে তাঁর জন্মভিটে ডিঙ্গামানিক গ্রামে গড়ে ওঠে সত্যনারায়ণ সেবা মন্দির। এরপর ১৯৪৯ সালের ১ মে তাঁর প্রয়াণ ঘটে। আজও অসংখ্য ভক্ত ও শিষ্য, প্রাণভরে ডাকলেই রামঠাকুরের কৃপা অনুভব করা যায় বলে দাবি করে থাকেন।

Ram Temple pujo Temple
Advertisment