কলকাতায় হোম ডাইনিংয়ের ট্রেন্ডে নয়া সংযোজন আওয়াধি (Awadhi) ঘরানার স্বাদ। বুঝলেন না তো? তাহলে আসুন আলাপ করাই এমন এক কলকাতা বাসিনীর সঙ্গে, যাঁর পূর্বপুরুষের হাত ধরে তিলোত্তমা প্রথম রসাস্বাদন করেছিল বিরিয়ানির। সেই বিরিয়ানি, যা আজ 'কলকাতা বিরিয়ানি' হিসেবে খ্যাত হয়ে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিয়েছে আমাদের শহরের সুনাম। ঈদের প্রাক্কালে রমজান যখন শেষের মুখে, এই হোম ডাইনিং-এর স্বাদগ্রহণ করতে অবশ্যই দেখা করুন এই নবাবী নাগরিকের সঙ্গে।
তিনি মনজিলাত ফাতিমা। ভারতের শেষ আওয়াধি নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের প্রপৌত্রীর কন্যা। খাস কলকাতাতেই তিনি চালু করেছেন প্রাইভেট বা হোম ডাইনিং, যেখানে পাওয়া যায় নানারকমের আওয়াধি খানা। তালিকার শীর্ষে অবশ্যই বিভিন্ন কাবাব, যেমন গলৌটি কাবাব, পসিন্দা কাবাব, রুতয়া কাবাব, হাণ্ডি কাবাব, বোটি কাবাব, সঙ্গে দো পিয়াজা, পরোটা, বিরিয়ানি...কী নেই? অবশ্য কলকাতায় যে বিরিয়ানি পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশ কিছুটা আলাদা ফাতিমার রেসিপি। সরষের তেলে তৈরি করেন মটন ও চিকেন বিরিয়ানি। পাওয়া যায় তাঁর ঠাকুমার বলে দেওয়া প্রণালীতে তৈরি এঁচোড় বিরিয়ানিও।
আরও পড়ুন: রমজানে ইফতার পাতে রকমারি, চেখে দেখতে পারেন
যে কোন শহরবাসী জানেন, এই মরশুমের বিশেষ পাওয়া হলো হালিম নামক স্বাদ-গন্ধ-বর্ণের সেই অপরূপ মিশ্রণ। তাও বিলকুল রয়েছে ফাতিমার হেঁসেলে। শুধু ঈদে নয়, বছরের যেকোন সময়ে পাওয়া যায় হালিম। একবার কলকাতার রুবি হাসপাতালের পেছনে কসবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এসস্টেটে গেলেই মিলবে এই স্বাদের সন্ধান। তাও একদম পকেটের সামঞ্জস্য রেখেই। বিরিয়ানি কিংবা হালিম, রেঁস্তোরার কাছাকাছি দামেই পাওয়া যাবে নির্ভেজাল আওয়াধি স্বাদের ভাগ।
রমজান মাসে সবাই যখন পা বাড়াচ্ছেন জাকারিয়া স্ট্রিটের দিকে, তখন মে মাস থেকে শুরু হয়েছে এই হোম ডাইনিং ব্যবস্থা। আওয়াধি খাবারের ব্লাডলাইন লখনউ থেকে সোজা কলকাতায়। কীভাবে শুরু? "অনলাইন ডেলিভারিতে খাবার নষ্ট হচ্ছিল, বাড়ির লোকজনও বাড়তি খাবার খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই এক খাদ্যরসিক বন্ধুর আবদারে নিজের বাড়িতে ডাকলাম তাঁকে। ব্যস, আমার হোম ডাইনিং শুরু হয়ে গেল," কাজের ব্যস্ততার মাঝেই বললেন ফাতিমা।
Eid al-Fitr 2018: খাস কলকাতাতেই মনজিলাত ফাতিমা চালু করেছেন প্রাইভেট ডাইনিং, পাওয়া যায় নানারকম আওয়াধি খানা
Eid al-Fitr 2018: মনজিলাত ফাতিমার গলৌটি কাবাব। ছবি: ফেসবুক থেকে
চার বছর আগে নিজের প্যাশনকে একরকম প্রফেশন করে নিয়েছিলেন তিনি। তবে উদ্দেশ্য রোজগার নয়, তাঁর নবাবি ঘরানার সংস্কৃতিকে জিইয়ে রাখা, সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া। "শুরুটা করেছিলাম এক বন্ধুর ক্যাফে কম দামে কিনে নিয়ে। সেখান থেকেই ডেলিভারি করতাম খাবারের। বিশেষ করে হালিমের। আর এখন তো স্যুইগি, জোম্যাটোর সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেছি। কোনোটাই ভাবিনি হবে," বলছেন ফাতিমা।
খোলা ছাদে মনজিলাতের টেবিল পড়ে। সেজে ওঠে ঘরোয়া রেস্তোরাঁ। বিকেলের ডাইনিংয়ের ব্যবস্থা চলছে পুরোদমে, হঠাৎ বললেন, "ঈদ স্পেশাল তো এবছর থেকে শুরু, তার আগে আমি কেটারিংও করেছি। তবে পঞ্চাশ জনের বেশী লোকের জন্য খাবার বানাতে পারি না, ভয় পাই। যদি স্বাদ ঠিকঠাক না হয়।"
আনন্দ সংবাদ হলো, এখন শুধু কলকাতাই নয়, তাঁর ডাক আসে মুম্বাই, গুয়াহাটি থেকেও। রমজানের পর তিনি ছাদে আসন সংখ্যাও বাড়াতে চলেছেন। পুজোয় বাঙালিদের জন্য রাখবেন আওয়াধি খাবারের খাজানা। আর শুধু ডিনার নয়, ব্যবস্থা করবেন সান্ধ্য ভোজনেরও।
আপাতত চিন্তা, কলকাতায় বর্ষা শুরু। আর যা বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে সব আয়োজন না ভেস্তে যায়। ঈদ-উল-ফিতরের পসরা সাজানোর ব্যবস্থা হয়ে গেছে যে। কোথায়- রুবি এন্টারপ্রাইজ, আনন্দুপুর রোড, কসবা ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, প্লট-১, ফেজ -৩, কলকাতা। যোগাযোগ- ৯৪৩২৯১৩২০৪।