সাধনক্ষেত্র বাংলা। যেখানে শাক্ত, শৈব, বৈষ্ণব- সব সাধনাই মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। এই বাংলায় বহু প্রাচীন মন্দির রয়েছে। তার বেশিরভাগের খোঁজই আমরা রাজ্যবাসী রাখি না। অথচ এখানেই কয়েক শতাব্দী প্রাচীন মন্দির রয়েছে। তার আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। পিছনে রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। সেকথা আমরা ক'জনই বা জানি। যাঁরা জানেন, তাঁরা কিন্তু নিয়মিত ওই সব মন্দিরে যাতায়াত করেন। এমনই এক মন্দির হল রাঢ়েশ্বর শিব মন্দির। প্রায় ৮০০ বছরের প্রাচীন এই মন্দির রয়েছে দুর্গাপুরের কাঁকসা থানার আড়ড়া গ্রামে।
কথিত আছে, অতীতে আড়ড়া, বামুনাড়া, গোপালপুর, রূপগঞ্জ, কালীগঞ্জ, গড়জঙ্গল মিলে এক সমৃদ্ধ নগরী ছিল। যার কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই শিব মন্দির। যে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন। জটিল রোগে আক্রান্ত রাজা বল্লাল রোগমুক্ত হতে এই মন্দির তৈরি করান। তারপর প্রায় অলৌলিকভাবে তিনি সুস্থও হয়ে উঠেছিলেন। তখন থেকেই নাকি নিত্যপুজো চলে আসছে এই শিব মন্দিরে। তবে, কোনও প্রতিষ্ঠালিপি না-মেলায় প্রকৃত সত্যিটি কী, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছেই।
আরও পড়ুন- যেখানে শনিও পূরণ করেন ভক্তদের মনস্কামনা, খাস কলকাতাতেই রয়েছে এমন মন্দির
ইতিহাস বলে, বল্লাল সেন ১১৬০ থেকে ১১৭৯ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তারপর ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বল্লাল সেনের পুত্র লক্ষণ সেন রাজত্ব করেন। আাবার, অষ্টাদশ শতকে মালদহের প্রাপ্ত ঈশ্বর ঘোষের তাম্রলিপি থেকে ঐতিহাসিকদের অনুমান লিপিটি একাদশ-দ্বাদশ শতকে খোদিত হয়েছিল। আবার, একদল গবেষকের মতে মন্দিরটি হাজার বছরের পুরোনা।
ভক্তদের বিশ্বাস, এই মন্দিরের উত্তর দিকে একটি পুকুর আছে। যার নাম কালদিঘি। মহাদেব স্বয়ং নাকি ওই পুকুরে স্নান করেছিলেন। তবে, অনেকগুলো পুকুর থাকায় কোনটি আসল কালদিঘি, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেননি ভক্তরা। সে যাই হোক। মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে বড় বড় গাছ। খোলা আকাশের নীচে রয়েছে মহাদেবের মূর্তি। পাশাপাশি রয়েছে টেরাকোটার বেশ কিছু হাতি-ঘোড়া। যা এক অন্যরকম পরিবেশ উপহার দিয়েছে এই মন্দিরকে। যেটা অন্য মন্দিরগুলোয় সচরাচর খুঁজে পাওয়া যায় না।