সূর্যপুত্র শনি। তাঁকে সকলে গ্রহরাজ বলেন। প্রায় সকলেই তাঁকে সমীহ করেন। তাঁর আড়াই, বক্রদৃষ্টি এবং সাড়েসাতিকে ভয় পান। কারণ, শনি বাধাকারক গ্রহ। শুভ কাজে দেরি হওয়া। সম্পর্কের অবনতি ঘটা। কর্মক্ষেত্রে, ব্যবসায় ক্ষতি। অপবাদ, কারাদণ্ড, পঙ্গু হয়ে যাওয়া, রোগভোগ, দুর্ঘটনা, মৃত্যু- এই সব কিছুই শনির কারণে হয়ে থাকে।
কিন্তু, জানেন কি, শনিও কাউকে ভয় পান? কারণ, একাধিকবার শনির সঙ্গে তাঁর টক্কর ঘটেছে। প্রতিবারই সাজা ভোগ করতে হয়েছে শনিকেই। যার জন্যই শনি তাঁকে ভয় পান। সেই তিনি হলেন বজরংবলী হনুমান।
কোথায় এবং কীভাবে শনির সঙ্গে বজরংবলীর দেখা হয়েছে, তা একবার বরং জেনে নেওয়া যাক। বজরংবলী হলেন সূর্যের শিষ্য। আর, শনি হলেন সূর্যদেব এবং দেবী ছায়ার ছেলে। নানা কারণে শনির সঙ্গে সূর্যদেবের সম্পর্ক খারাপ হয়। এতে সূর্যদেবেরও ভূমিকা রয়েছে। শনি কুদর্শন হওয়ায় তিনি ছেলেকে দেখতে পারতেন না। পরে ভুল বুঝতে পেরে শনিকে বারবার ডেকে পাঠান সূর্যদেব। কিন্তু, শনি আসতে রাজি হননি।
শেষে শিষ্য বজরংবলীকে দায়িত্ব দেন সূর্যদেব। শনির প্রখর তেজের বলয় উপেক্ষা করে তাঁর শনিলোকে প্রবেশ করেন বজরংবলী। তিনি শনিদেবকে তাঁর সঙ্গে সূর্যালোকে যাওয়ার আহ্বান জানান। শনি তো হেসেই উড়িয়ে দেন বজরংবলীকে। উলটে এক বানর বিনা অনুমতিতে তাঁর লোকে প্রবেশ করেছে। আর, তাঁকে নিজের সঙ্গে যেতে বলছে, এসব দেখে-শুনে কুপিত হন। কথিত আছে, এরপর শনি সরাসরি আক্রমণ করেন হনুমানকে। কিন্তু, সুবিধা করে উঠতে পারেননি। উলটে, বজরংবলীই তাঁকে বেশ কয়েকবার আছাড় মেরে তুলে নিয়ে যান সূর্যালোকে।
এর দ্বিতীয় কাহিনি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। লঙ্কার রাজা রাবণ, ছেলে মেঘনাদের মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ হয়ে সব গ্রহদের বন্দি করেছিলেন। তার মধ্যে শনিদেবও ছিলেন। শিবভক্ত রাবণ শিবের শক্তিতে বলীয়ান ছিলেন। সেই বিশেষ শক্তিবলেই তিনি বন্দি করেছিলেন গ্রহদের। রাবণের মৃত্যুবাণ খুঁজতে খুঁজতে হনুমান আবার পৌঁছে যান তাঁর কারাগারে।
সেখানে তিনি সব গ্রহকে বন্দি অবস্থায় দেখতে পান। হনুমান তাঁদের মুক্ত করেন। তখন সব গ্রহরাই হনুমানকে আশীর্বাদ করেন। সেই আশীর্বাদে তাঁরা জানান, হনুমান এবং তাঁর ভক্তদের ওপর কখনও গ্রহদের কুপ্রভাব পড়বে না। পড়লেও ধীরে ধীরে কেটে যাবে।
তৃতীয় কাহিনি হল, কলি কাল শুরু হয়ে গিয়েছে। এই কলি কালে শনির প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকবে বলে তাঁর ওপর আশীর্বাদ রয়েছে। বজরংবলী হনুমান অমর। তিনি রামভক্ত। তিনি সব কালেই রয়েছেন। কলিকালেও বজরংবলী রাম নাম জপ করছেন। সেই স্থান দিয়ে শনি যাচ্ছিলেন। কিন্তু, বজরংবলীর নাম জপের প্রভাবে সেই স্থানে এক বলয় তৈরি হয়েছিল। যা শনিদেব অতিক্রম করতে পারছিলেন না।
শনি যাবতীয় অতীত ভুলে প্রথমে বজরংবলীকে কটূক্তি করেন। এরপর বজরংবলীর ধ্যান ভাঙাতে তাঁর হাত ধরে টানাটানি করেন। এতে বজরংবলী শরীরে ছ্যাঁকা অনুভব হয়। তাঁর ধ্যানও ভেঙে যায়। তিনি শনিদেবকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন।
শনি তখন বজরংবলীকে পর্যুদস্ত করতে কুদৃষ্টির প্রয়োগ করেন। কিন্তু, তাতে বজরংবলীর কিছুই হয় না। এরপর শনি দিব্যাস্ত্র দিয়ে বজরংবলীকে আঘাত করার চেষ্টা করেন। পালটা বজরংবলী ল্যাজে বেঁধে শনিদেবকে গাছ এবং পাথরের ওপর বারবার আছাড় মারেন।
শনি তখন জানান, কলিযুগে তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ। সেখানে বজরংবলীর কোনও জোর খাটবে না। উলটে তিনি বজরংবলীর ওপর ভর করবেন। এই বলে শনি বজরংবলীর ওপর ভর করেন। এতে বজরংবলীর মাথায় চুলকোনির মত অনুভূত হয়। তিনি বিরাট আকারের পাথর তুলে নিয়ে নিজের মাথা ঘষতে শুরু করেন। যাতে শনির শরীরে আঘাত লাগে।
আরও পড়ুন-কীভাবে তুষ্ট করবেন বজরংবলীকে, জানেন কি কোথায় আছে হনুমানজির জাগ্রত মন্দির?
তিনি বজরংবলীর মাথা থেকে নেমে যান। তাঁর ওপর আর আঘাত না-করার জন্য বজরংবলীর কাছে অনুরোধ করেন। একইসঙ্গে জানিয়ে দেন, বজরংবলী ও তাঁর ভক্তদের ওপর কখনও শনির প্রভাব খাটবে না। খাটলেও ধীরে ধীরে তা কমে যাবে। একইসঙ্গে শনি জানিয়ে দেন, তিনি বজরংবলীর সঙ্গে থাকবেন। সেই কারণে, বহু মন্দির রয়েছে, যেখানে বজরংবলীর সঙ্গে শনিদেবেরও পুজো হয়।