প্রতিটি ভারতবাসীর জন্যই ২৬ জানুয়ারি দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কুচকাওয়াজ, বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ভারতকে ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত করা কোনও সহজ কাজ ছিল না। দেশের বীর সন্তান, স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগ, বলিদানের ফসল স্বাধীনতা। দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৪৭ সালে ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা লাভ করে ভারত। এবার ২৬ জানুয়ারি (Republic Day Of India) দেশের ৭৩ তম প্রজাতন্ত্র দিবস।
প্রজাতন্ত্র দিবসের গুরুত্ব কী? জেনে নিন এই দিনের নেপথ্যে থাকা ইতিহাস-
২৬ জানুয়ারি দিনটিকে মহাত্মা গান্ধী নাম দিয়েছিলেন, 'স্বতন্ত্রতা সংকল্প দিবস'। ১৯২৯ সালের বছর শেষে পূর্ণ স্বরাজ আনার শপথ নেওয়া হয় পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে। এরপরেই ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগাস্ট ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে ভারত এবং ওই দিনটি স্বাধীনতা দিবসের মর্যাদা পায়।
স্বাধীনতা দিবসের প্রায় আড়াই বছর পর তৈরি হয়েছিল দেশের সংবিধান। ১৯৪৭ সালে ড. বি আর আম্বেডকরের নেতৃত্বে গঠিত হয় খসড়া কমিটি। ১৯৪৭ সালে ৪ নভেম্বর ড: বি আর আম্বেদকরের নেতৃত্বাধীন খসড়া কমিটি প্রথম ভারতীয় সংবিধানের খসড়া জমা দিয়েছিল। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি ভারতীয় সংবিধান কার্যকর হয়। এই সূত্র ধরেই ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
২৬ জানুয়ারি মানেই রাজধানীর রাজপথে কুচকাওয়াজ, কলকাতার রেড রোডেও চোখে পড়ে সেই আড়ম্বর। প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের আগের দিন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন দেশের রাষ্ট্রপতি। প্রজাতন্ত্র দিবসে বিভিন্ন দেশের অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। তবে শুধু ভারতে নয়, অন্য দেশেও পালিত হয় প্রজাতন্ত্র বা সাধারণতন্ত্র দিবস। কোন দেশে কবে পালিত হয় প্রজাতন্ত্র দিবস?
প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান ১৯৫৬ সালের ২৩ মার্চ নিজেদের ইসলামিক রিপাবলিক বা প্রজাতন্ত্র হিসেবে ঘোষণা করে। এর নেপথ্যে যে কারণ রয়েছে তা জেনে নেওয়া যাক, ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পৃথক দেশের প্রস্তাব ঘোষণা করে। আর তাই সেই দিনটি সম্মান জানাতেই ২৩ মার্চ ইসলামিক রিপাবলিক বা প্রজাতন্ত্র দিবস হিসাবে পালিত হয় পাকিস্তানে।
ইতালির ক্ষেত্রে আবার ভিন্ন রীতি চোখে পড়ে। রাজতন্ত্রের অবসানের দীর্ঘ ৮৫ বছর পর রিপাবলিক হওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়। তাই ২ জুন গুরত্বপূর্ণ দিন ইতালিয়ানদের কাছে। সে দিন ওই দেশের প্রজাতন্ত্র দিবস।
তুরস্কের সংবিধান সংশোধনের পর শেষমেশ দেশ রিপাবলিক হিসেবে সারা পৃথিবীর কাছে আত্মপ্রকাশ করেছিল। দিনটি ছিল, ২৯ অক্টোবর, ১৯২৩ এটি একটি চিরস্মরনীয় দিন। ওই দিনই পালিত হয় সেদেশের প্রজাতন্ত্র দিবস। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার ক্ষেত্রে ৯ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়। কারণ নব্বইয়ের দশকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যুগোস্লাভিয়া ভেঙে গিয়ে এই দিনেই এই নবীন দেশের জন্ম হয়েছিল।