বাংলার শক্তিসাধকদের অন্যতম সাধক কমলাকান্ত ভট্টাচার্য। তাঁর পৈতৃক ভিটে পূর্ব বর্ধমানের অম্বিকা কালনায়। পূর্ব বর্ধমানের গলসি ২ নম্বর ব্লকের চান্না গ্রামে দেবী বিশালাক্ষীর মন্দিরে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। কমলাকান্তের বাবার নাম ছিল মহেশ্বর ভট্টাচার্য। মায়ের নাম মহামায়া দেবী। অল্পবয়সে পিতৃহারা হন কমলাকান্ত। তাঁর মামার নাম ছিল নারায়ণ ভট্টাচার্য। তাঁর বাড়িতেই সন্তানকে নিয়ে ওঠেন মহামায়া দেবী। সেই মামাবাড়ি ছিল পূর্ব বর্ধমানের চান্না গ্রামে। পরে ব্যাকরণ শাস্ত্রে পণ্ডিত হয়ে টোল তৈরি করেছিলেন।
Advertisment
তাঁর পাঁচটি টোল ছিল। বহু পড়ুয়া সেই টোলে আসতেন। পরে বিশালাক্ষীতলায় তিনি আসন তৈরি করে সেখানেই উপাসনা শুরু করেন। তাঁর কণ্ঠস্বর ছিল অতি মধুর। একথা জানতে পেরে বর্ধমান রাজবাড়ির দেওয়ান এসে কমলাকান্তকে নিয়ে গিয়েছিলেন। চান্না গ্রামে বিশালাক্ষীতলার মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। তাঁদের দাবি, কুষ্ঠরোগীও এখানে এসে পূর্ণ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। বর্ধমানের রাজা সভাকবি করে তাঁকে নিয়ে যাওয়ার পর সাধক কমলাকান্ত বর্ধমান শহরে থাকতেন। বর্ধমান শহরের রাজগঞ্জে বিসি রোডের কাছেই তাঁর নামে রয়েছে বিখ্যাত কালীবাড়ি। যা কমলাকান্ত কালীবাড়ি নামে পরিচিত। ১২১৬ খ্রিস্টাব্দে মন্দিরটি তৈরি করিয়েছিলেন বর্ধমানের রাজা তেজচাঁদ বাহাদুর।
মন্দিরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটির উচ্চতা সাড়ে ছয় ফুট। শাক্ত পদাবলির রচয়িতা, কবি, সাহিত্যিক, সুরকার- বহু গুণে গুণবান ছিলেন কমলাকান্ত। ভক্তদের অনেকের দাবি, তিনি বর্ধমান শহরে রাজগঞ্জের মন্দিরে বেলগাছের তলাতেও সিদ্ধিলাভ করেছিলেন। এখন এই মন্দির দেখভাল করে কমলাকান্ত কালী ট্রাস্ট। মন্দির খোলার সময় সকাল ৬টা থেকে বেলা ১২টা ৩০ পর্যন্ত, বিকেল ৪টা ৩০ থেকে রাত ৮টা ৩০ পর্যন্ত। কার্তিক অমাবস্যায় এই মন্দিরে বিশাল আকারে পুজোর আয়োজন হয়। এই সময় এখানে অন্নকূট উৎসবের আয়োজন করা হয়। এই মন্দিরে সাধক কমলাকান্তের সমাধির ওপর রয়েছে দেবী কালীর বিগ্রহ। এই কালী জীবন্ত বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।