Sarala Devi Chaudhurani: তাঁর আঠারো কি উনিশ বছর বয়সে লেখা, দু'টো প্রবন্ধ পড়ে এতটাই বিস্মিত হয়েছিলেন স্বয়ং সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যে, অভিনন্দন জানিয়ে চিঠি লিখেছিলেন সদ্য কৈশোর পার করা সেই মেয়েকে। এমনকী গানের সুর দেওয়া, নানারকম বাজনায় তাঁর বিরল প্রতিভায় মুগ্ধ বঙ্কিমচন্দ্র নিজের কবিতায় সুরারোপ করার ফরমায়েশ পর্যন্ত করেছিলেন তাঁর কাছে। এমন কাজ তাঁকে প্রায়ই দিতেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেকারণেই রবীন্দ্রনাথের বহু কালজয়ী গানের সুরের নেপথ্যে তিনিই। এমনকি রবীন্দ্রনাথের এক কথায় বঙ্কিমের 'বন্দে মাতরম'-এর শেষ চারটে স্তবকের সুরও তাঁরই করা। মূর্তি পুজোর ঘোর বিরোধী মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিরল প্রতিভার কৃতিত্ব দেখে তাঁকে বলেছিলেন- 'তুমি সরস্বতী'। ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামের অন্যতম তিন উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক, 'লাল-বাল-পাল'- লালা লাজপত রায়, লোকমান্য বাল গঙ্গাধর তিলক আর বিপিন চন্দ্র পাল- তিনজনই যে শুধু তাঁর গুণমুগ্ধ ছিলেন তাই নয়। বয়সে ছোট সেই নারীর প্রতি এঁদের প্রত্যেকেরই ছিল প্রশ্নাতীত সম্ভ্রম।
স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর সম্বন্ধে সিস্টার নিবেদিতাকে বলেছিলেন- ওঁর 'education perfect'। দেশের সব মেয়ের ওঁর মতন 'education' হওয়া চাই। মনে-প্রাণে চেয়েছিলেন সে যেন তাঁর সঙ্গে বিলেতে গিয়ে একইসঙ্গে পাশ্চাত্যের সমাজে শোনান প্রাচ্যের গরিমার কথা, সংস্কৃতির কথা, অধ্যাত্মের কথা, মাহাত্ম্যের কথা। তাঁর জ্ঞানে, গুণে, ব্যক্তিত্বে আপ্লুত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ১৯২০-র ১০ অগাস্ট, জার্মান-পোলিশ বংশদ্ভূত স্থপতি, বন্ধুস্থানীয় হেরমান কালেনবাখকে চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন- তাঁর সঙ্গে ওঁর নিজের সম্পর্ক, 'beyond definition'। তিনি নাকি গান্ধীজীর, 'spiritual wife'। যদিও তাঁর দিক থেকে গান্ধীজীর প্রতি এমন কোনও অনুভূতির কণামাত্র যে কোনওদিন ছিল এমন কস্মিনকালেও কেউ কখনও শোনেন, জানেন বা দেখেননি। আরেক দেশবরেণ্য মানুষ, অরবিন্দ ঘোষ যাঁর সঙ্গে তাঁর প্রত্যক্ষ যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছিল এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ত্যাগ, তিতিক্ষা, বল-বীর্য আর দেশপ্রেমের নিরিখে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংগঠন- অনুশীলন সমিতি। তিনি সরলা দেবী চৌধুরানী- জন্মসূত্রে সরলা ঘোষাল।
১৯১১ সালের ২৯ জুলাই খাঁটি ভারতীয়দের ফুটবল দল হিসেবে মোহনবাগান যখন প্রথম 'আই-এফ-এ শিল্ড' জিতল– টানা কয়েক শতাব্দী যাবৎ অত্যাচারিত, অবহেলিত পরাধীন ভারতবাসীর জন্য সেই জয় নিছক ফুটবল খেলায় জয় ছিল না। তা ছিল দোর্দণ্ডপ্রতাপ বিদেশি শাসকের বিরুদ্ধে যেন এক যুদ্ধ জেতার শামিল। টানা কয়েক'শ বছর পরাধীন। যার মধ্যে শেষ প্রায় দেড়'শ বছর আবার তাদেরই শাসন ক্ষমতার মুঠোয় থাকা একটা দেশের প্রায় হীনবল হয়ে যাওয়া একটা জাত। তাদেরই ছেলেদের নিয়ে গড়া একটা দল- খেলার মাঠে হলেও সেই তারাই একের পর এক শক্তিশালী ব্রিটিশ দলকে পর্যদুস্ত করে শেষ পর্যন্ত শিরোপা জিতে নিচ্ছে। প্রবল পরাক্রমী ব্রিটিশদের জন্য খুব স্বাভাবিক ভাবেই এমন ঘটনাক্রম ছিল সীমাহীন গ্লানির। আর হতাশারও।
অন্যদিকে দীর্ঘ পরাধীনতার কারণে অত্যাচারে, অপমানে, অবহেলার গ্লানিতে জর্জরিত আর তাতেই অভ্যস্ত হয়ে ওঠা এই ভারতভূমির সন্তানদের জন্য প্রবল পরাক্রমী শাসকের বিরুদ্ধে কোনও লড়াইতে এমন নির্ণায়ক জয়ের গৌরব উদযাপন করার মতন ঘটনা এর আগে খুব একটা ঘটেনি। স্বাভাবিক ভাবেই এমন একটা আবহে বাঙালি তথা ভারতীয়দের মালিকানা আর পরিচালনায় চলত এমন প্রায় সবকটা খবরের কাগজ, পত্র পত্রিকাগুলো খাঁটি স্বদেশি দল মোহনবাগানের এই জয় নিয়ে ছিল ভীষণ উচ্ছ্বসিত। যদিও বলাই বাহুল্য, এ দেশ থেকে প্রকাশিত ইউরোপিয়ান, মূলত ব্রিটিশদের পরিচালিত পত্রপত্রিকাগুলোর পাশাপাশি বিলেতের কাগজগুলোও নিজেদের এমন হেরে যাওয়া সহজে মেনে নিতে পারেনি। তা সত্ত্বেও সাংবাদিকতার দায়িত্ব আর মর্যাদা রক্ষার্থে নিজেদের পরাজয়ের এই সংবাদ পুরোপুরি উপেক্ষা করে তার থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতেও পারেনি।
এ নিয়ে তাদের প্রায় সবার অবস্থান ছিল খানিকটা, 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' মার্কা। তবে ওই সময়ের বিরল ব্যতিক্রম বোধ হয়েছিলেন একজন- স্যামুয়েল কেরখাম র্যাটক্লিফ। যিনি নিজেও জন্মসূত্রে একজন ব্রিটিশ। ১৯০২ থেকে ১৯০৭ পর্যন্ত, তিনি ছিলেন শহর কলকাতারই বাসিন্দা। আর কলকাতা থেকেই প্রকাশিত, মূলত ব্রিটিশরাজের ধামাধারী বলে সেই সময়ে বিশেষ ভাবে পরিচিত ইংরেজি সংবাদপত্র 'দ্য স্টেটসম্যান'-এর 'ভারতীয়দের প্রতি সহানুভূতিশীল' এক ব্যতিক্রমী সম্পাদক। যদিও ১৯১১-তে মোহনবাগান যখন শিল্ড জিতছে, তিনি তখন বিলেতে। সেখানকার বিখ্যাত সংবাদপত্র 'দ্য ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান'-এর সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। বছর চারেক আগে কলকাতা থেকে প্রায় বাধ্য হয়েই সস্ত্রীক র্যাটক্লিফ ফিরে গিয়েছিলেন তাঁর নিজের দেশে। আর খোদ বিলেতের মাটি থেকেই মোহনবাগানের শিল্ড জয়ের খবর আর বাঙালি তথা ভারতীয়দের কাছে সেই জয়ের গুরুত্ব 'ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান'-এর পাতায় অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি ছাপেন। সেই সঙ্গে তাঁর খবরের কাগজে এ কথাও স্যামুয়েল র্যাটক্লিফ লেখেন- 'আমরা জানি এ ঘটনায় সবচেয়ে বেশি আনন্দিত যিনি হবেন তিনি হচ্ছেন- সরলা দেবী- বাঙলার এক নন্দিনী।'
১২৭৯-র ভাদ্র মাসের ললিতা সপ্তমী তিথিতে- গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার ১৮৭২-এর ৯ সেপ্টেম্বর- ৬ নং দ্বারকানাথ ঠাকুর স্ট্রিটে জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুরবাড়ির তিনতলার একটা রোদফাটা কাঠের ঘরে জন্ম হয়েছিল সরলার। অমন একটা ঘরই ছিল সে বাড়ির সূতিকাগৃহ। মা, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা, প্রথম বাঙালি মহিলা ঔপন্যাসিক স্বর্ণকুমারী দেবী। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা-সদস্য জানকীনাথ ঘোষাল সরলার বাবা। জানকীনাথ ছিলেন নদীয়ার এক বর্ধিষ্ণু জমিদার জয়চন্দ্র ঘোষালের একমাত্র সন্তান। ১৯৪৭-এর পরবর্তী সময়ে এ দেশের নীতিনির্ধারকদের সুপরিকল্পনায় হোক, কী চরম অবহেলায়- সরলা দেবী হারিয়ে যান বৃহত্তর সমাজের স্মৃতি থেকে, মনন থেকে, চিন্তা থেকে। ভারত মাতার এই ক্ষণজন্মা সন্তানের কীর্তির কথা কোনও এক প্রবন্ধের সীমাবদ্ধতায় বলা সম্ভব না হলেও- দুর্গাষ্টমীর পুণ্যতিথির সঙ্গে বিশেষ ভাবে সম্পর্কযুক্ত তাঁর এক কীর্তির কথা রইল আপনার আর আপনার পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে।
সরলা দেবী নিজেই লিখেছিলেন- 'বড় হয়ে দেখলুম বাংলার ললাটে প্রধান কলঙ্ক হচ্ছে কাপুরুষতার- সেইটিই মুছতে হবে। কুকুরের দাঁত আছে, বেড়ালের নখ আছে, আক্রমণ করলে একটি পোকামাকড়ও কামড়ায়- শুধু বাঙালিই কি সাত চড়েও রা কাড়বে না? এত মনুষ্যত্বের অভাব তার চিরকাল? এত হীনতা?' আধুনিক বাঙালির কাপুরুষতার সংস্কৃতি সবসময়ে যন্ত্রণা দিয়েছে তাঁকে। অক্লান্ত চেষ্টা করেছেন আজীবন সেই য্ন্ত্রণামুক্তির উপায় খুঁজে বের করতে। সেটা করতে গিয়েই দৃষ্টি গেল বাংলায় একটা জাতীয় উৎসবের দিন নির্দিষ্ট করার দিকে। যেমন মহরমের দিনে মুসলমানদের নানারকম অস্ত্রচালনার প্রদর্শনী চলে পথেঘাটে, তার জন্যে সারা বছর ধরে নানা আখড়ায় নানা নেতার অধীনে নানা দল সেগুলো অভ্যাস করে। যেমন রামলীলা বা দশেরা অর্থাৎ বিজয়া দশমীর দিনে বাংলার বাইরের হিন্দু ভারতে বীরোচিত নানা খেলাধুলো চলে- বাংলাতেও তেমন একটা করতে হবে। কিন্তু কবে? কোন দিনে? সেই প্রশ্ন মাথায় ঘুরতে লাগলো।
ভারতের বাকী প্রদেশগুলোতে বিজয়া দশমী ঠিক বাংলার মতন নয়। সেখানে কোথাও প্রতিমার ভাসানের পর্ব নেই। কিন্তু সেই দিনে বাংলায় সবাই ব্যস্ত থাকে প্রতিমা বিসর্জন নিয়ে। সেদিন খেলাধুলোর অনুষ্ঠান করার সময় কারও হবে না। অথচ শারদীয় ঋতুতে যে সময় শমীবৃক্ষ থেকে তাঁদের অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে পাণ্ডবরা বীরভোগ্যা বসুন্ধরায় অভিযান শুরু করেছিলেন, সেই সময়েই বাঙালীদের বলবীর্য সাধনার জাতীয় উৎসব না হলে দেশের বাকি সব হিন্দুদের সঙ্গে তাঁরা ঐক্যসূত্রে বাঁধা পড়বেন না। এমন দ্বিধাগ্রস্ত অবস্থায় বাঙালির পঞ্জিকা তাঁর সহায় হল।
বিংশ শতাব্দীর একেবারে গোড়ার কথা। ১৯০২ কি ১৯০৩ হবে। সেই বছর দুর্গাপুজোর ছুটি কবে থেকে সেটা জানার জন্যে পঞ্জিকার পাতা উল্টোতে উল্টোতে চোখে পড়ে গেল- দুর্গাপুজোর অষ্টমীর আরেক নাম 'বীরাষ্টমী'। আর সেদিন 'বীরাষ্টমী ব্রত' পালন করা আর ব্রতকথা শোনানোর বিধানও তাঁর চোখে পড়ল। আর দিন খুঁজতে হল না। ভেবে বের করতেও হল না। যা চাইছিলেন, তা পঞ্জিকাতেই পেয়ে গেলেন। বহুকাল ধরে বাংলার সংস্কৃতিতেই যা রয়েছে কিন্তু বাঙালির ব্যবহার থেকে হারিয়ে গিয়েছে, শুধু তাকে পুনরুদ্ধার করলেই হল। বাঙালি মায়েদের বীরমাতা হওয়ার লক্ষ্যপথে আবার নিয়ে আসা। সে বিষয়ে তাঁদের ব্রতের আবার প্রচলন করা। ভীরু বাঙালি মায়েদের হাত দিয়েই ছেলেদের 'রক্ষাবন্ধন' করিয়ে মায়ের নিজের মুখে 'বীরভব' বলে ছেলেকে বীরোচিত খেলাধূলায়, কাজকর্মে এগিয়ে দেওয়া।
মায়ে-ছেলেতে মিলে দেশকে গৌরবের শিখরে নিয়ে যাওয়ার সাধনা যেখানকার ধর্মোৎসবের একটা অঙ্গ ছিল, সে দেশ, সে প্রদেশ, সে অঞ্চল এত হীন, এত পতিত হয়েছে কেমন করে? তাই ভেবে সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিল সরলার। ভাবলেন, বাংলার অনেক ছেলেই তো তাঁকে 'মা' বলে ডাকে। না জেনে আগে থাকতেই তাঁদের অনেকের হাতেই তিনিও তো রক্ষাবন্ধন করেছিলেন- রাখি বেঁধে দিয়েছিলেন। তখন যখন জানতে পারলেন ওই দিনে বাংলার দেশাচারই তাই– সব মায়ের কর্তব্যই তাই- তখন মনে করলেন ক্লাবে ক্লাবে সব খেলোয়াড়দের, সব ছেলেদের হাতে ওই দিন রাখি বেঁধে তাঁদের খেলাধূলায়, শরীরচর্চায়, ক্ষাত্রশক্তির আরাধনায় এগিয়ে দেওয়াই তাঁর ধর্ম। তাঁর জন্যে দেশমাতার সেটাই আদেশ। না হলে পঞ্জিকার ওই নির্দিষ্ট পাতাতেই তিনি সরলার দৃষ্টি পড়ালেন কেন? সেই থেকে আবার বীরাষ্টমী উৎসবের সূচনা হল।
সেই বছরই মহাষ্টমীর দিন সরলা দেবীর ২৬নং, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের বাড়ির মাঠে ছেলেদের অস্ত্রবিদ্যার প্রদর্শনী ঘোষণা করা হল। কলকাতায় যত ক্লাব তাঁর জানা ছিল, সকলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বলা হল- তারা যেন উৎসবে যোগ দেয় আর প্রতিযোগিতায় নামে। শহরজুড়ে ব্যাপক সাড়া পড়ে গেল। পড়াশোনা শেষ করে শিক্ষকতার কাজ নিয়ে সরলা যখন বছর খানেক মহীশূরে ছিলেন, মুর্শিদাবাদের নবাব-বেগম সাহেবার মেয়ে, সুজাতালি বেগের স্ত্রী সেই সময় থেকেই ছিলেন তাঁর বন্ধু। অনুষ্ঠানের কথা বলে তাঁকে আমন্ত্রণ করায় তিনি আসতে রাজি হলেন। লেসের পরদা ঘেরা একটা মঞ্চের ভিতর সেদিন মা আর মাসিদের সঙ্গে তাঁর জন্যেও বসার ব্যবস্থা করেছিলেন সরলা। পরদার ভিতর থেকে বাড়ানো তাঁর হাত দিয়েই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করালেন। কাউকে বক্সিংয়ের গ্লাভস, তো কাউকে ছোরা, তো কাউকে লাঠি। সঙ্গে একটা করে মেডেল। যার একদিকে খোদাই করে দেবনাগরীতে লেখা- 'বীরোভব'। আর অন্যদিকে, 'দেবাঃ দুর্বলর্ঘাতকাঃ।' বীরাষ্টমী উৎসবের একটা অনুষ্ঠান পদ্ধতিও ঠিক করলেন- ফুলের মালায় সুন্দর করে সাজানো একটা তালোয়ারকে ঘিরে দাঁড়িয়ে দেশের ইতিহাসের সমস্ত বীরদের বন্দনা-স্তোত্র। আর তাঁদের নাম উচ্চারণ করে করে সেই তলোয়ারে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া। সেই স্তোত্রের শুরুটা ছিল এমন-
'বীরাষ্টম্যাং মহাতিথৌ পূর্ব পূর্বগতান্ বীরান্
নমস্কুর্য ভক্তিপূর্বং পুষ্পাঞ্জলিং দদাম্যহম্।'
তারপরে ন'খানা শ্লোকের প্রতিটায় একে একে নন্দপুত্র শ্রীকৃষ্ণ, রঘুকুলপতি রামচন্দ্র, ভীষ্ম-দ্রোণ-কর্ণার্জুন-ভীম, মেঘনাদ ইন্দ্রজিৎ, রানা প্রতাপ, ছত্রপতি শিবাজি, পঞ্জাবকেশরী রণজিৎ সিংহ, বাংলার প্রতাপাদিত্য আর শেষে বাংলারই সীতারাম রায়কে শ্রদ্ধা নিবেদন। যখন এক এক জনের নাম করে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হত- একটা প্রবল উত্তেজনার সৃষ্টি হত উপস্থিত জনতার মধ্যে। এই বন্দনা স্ত্রোত্র লিখেছিলেন খিদিরপুরের বাসিন্দা, সেকালের প্রসিদ্ধ স্বদেশি আশুতোষ ঘোষ। বীরাষ্টমী উৎসব গোটা বাংলায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল তখন। যে সব দেশভক্তরা কলকাতায় এসে পৌঁছতে পারতেন না, তাঁরা নিজেদের এলাকায় এর অনুষ্ঠান আরম্ভ করলেন। সরলা দেবী সকলকে বলেছিলেন যেখানে কোনও ব্যবস্থা নেই- তেমন গ্রামে যেন সেদিন ছেলেরা অন্তত সাঁতার কাটার প্রতিযোগিতা আয়োজন করেন। মোট কথা দুর্গাষ্টমী তিথিতে শারীরিক বলবীর্যের অনুষ্ঠান চাই, আর মায়ের হাত থেকে রাখি নেওয়া চাই।
গ্রন্থঋণ:
১) জীবনের ঝরাপাতা - সরলা দেবী
২) নব-বর্ষের স্বপ্ন - সরলা দেবী
৩) ভারতী - সন ১৩৩১ - দ্বিতীয় সংখ্যা