Saraswati Puja in West Bengal: বসন্তপঞ্চমী তিথিতে ঘটা করে বিগ্রহ বাড়িতে এনে দেবীর পায়ের কাছে দোয়াত, খাগের কলম এগিয়ে দেওয়া নয়। সরস্বতী পুজোই বাঙালির আসল ভ্যালেন্টাইন'স ডে। এহেন সংলাপে আধুনিকতা আর পৌরাণিকতাকে মেশানোর চেষ্টাও নয়। আবার, কৃষিপ্রধান দেশ, নদীমাতৃকতা থেকে দেবীর আবির্ভাব মার্কা তত্ত্ব আউড়ানোও নয়। এই মন্দিরে সারাবছর হিন্দুদের বিদ্যার দেবী সরস্বতীর পুজো হয়। নতুন শুরু হয়নি। একশো বছরেরও বেশি সময় ধরেই এমনটা চলছে।
- ১৯২৩ সালে হাওড়ার বাড়িতে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়।
- মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রার দিনে।
- বসন্তপঞ্চমীতে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়ে থাকে।
মন্দিরের ইতিহাস
গোটা দেশে অসংখ্য মন্দির আছে। কিন্তু, সরস্বতীর মন্দির দূরবীন দিয়ে খুঁজে বের করতে হয়। সেই দুর্লভ মন্দির রয়েছে এই বাংলায়, হাওড়ার পঞ্চাননতলায়। ঠিকানা, ১নং-উমেশচন্দ্র দাস লেন। পরিবারের সদস্য অমলেন্দু দাস জানিয়েছেন, তাঁর ঠাকুর্দা রণেশচন্দ্র ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার। কর্মসূত্রে থাকতেন রাজস্থানে। সেখানকার জয়পুর থেকেই তিনি চার ফুটের শ্বেতপাথরের দেবী সরস্বতীর মূর্তি এনেছিলেন। এরপরই ১৯২৩ সালে হাওড়ার বাড়িতে জগন্নাথের স্নানযাত্রার দিনে, জুন মাসে দেবী সরস্বতীর মন্দির তৈরি হয়।
মন্দিরের বর্ণনা
রণেশচন্দ্রর ভাই সুরেশচন্দ্র ছিলেন পেশার চিকিৎসক। ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়ের ঘনিষ্ঠ। ডাক্তার রায় হাওড়ার এই বাড়িতে সেই সূত্রেই এসেছিলেন বলেই দাবি অমলেন্দু দাসের। এই গৃহমন্দিরের গর্ভগৃহে শ্বেতপাথরের বেদিতে ছোট এক সিংহাসনে রয়েছে শালগ্রাম শিলা। গর্ভগৃহের মাথায় আছে গম্বুজাকৃতির চূড়াঘর। শীর্ষে পদ্মের ওপর রয়েছে কলস আর এিশূল। খিলানের মাথায় চারকোণে চারটি হাঁস রয়েছে। খিলানগুলো দেবীর বীণা, পদ্ম প্রভৃতি দিয়ে অলংকৃত।
আরও পড়ুন- দেবীর বর্ণ এখানে সবুজ, সরাসরি দর্শন দিয়েছিলেন সাধককে, জাগ্রত বিগ্রহ
নিত্যপুজো ও বিশেষ পুজো
এই মন্দিরে ১০৮টি মাটির খুরিতে বাতাসা আর ফল দিয়ে দেবী সরস্বতীর নিত্যপুজো হয়। মূর্তি প্রতিষ্ঠা হওয়ার সময় থেকে এই রীতি চলে আসছে। সারা বছর নিত্য পুজোর পাশাপাশি বসন্তপঞ্চমীতে সরস্বতী পুজোর দিন আর মন্দিরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী বা জগন্নাথের স্নানযাত্রার দিন আয়োজিত হয় বিশেষ পুজো। সেই সময় বাসন্তী রঙের শাড়িতে নতুন করে সাজানো হয় দাসবাড়ির প্রতিমাকে। পাশাপাশি, সেজে ওঠে গোটা মন্দির।
আরও পড়ুন- সরস্বতী পুজোয় যুগ যুগ ধরে হলুদ পোশাকের চল, কেন জানেন?
মন্দিরে পৌঁছনোর পথ
হাওড়া স্টেশন থেকে কদমতলাগামী যে কোনও বাসে চেপে নামতে হবে বঙ্কিম পার্ক স্টপেজে। এর ঠিক পাশেই রয়েছে উমেশচন্দ্র দাস লেন। সেই গলির মধ্যে রয়েছে এই মন্দির।