Advertisment

ক'দশক আগেও কেমন ছিল বাঙালির ভ্যালেন্টাইন্স ডে উদযাপন?

মফঃস্বলের স্কুলে একমাত্র সরস্বতী পুজোর দিনটাতেই ছিল মেয়েদের স্কুলে ছেলেদের অবাধ যাতায়াত। আগে একদিন মাস্টারদের বাছাই করে দেওয়া স্কুলের সবচেয়ে ঝকঝকে, সম্ভাবনাময় এবং 'ল্যাজবিহীন' চার থেকে পাঁচজন  ছাত্রের ওপর পড়ত আমন্ত্রণ পর্বের গুরুদায়িত্ব।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ছবি-শশী ঘোষ

১৪ ফেব্রুয়ারি, আকাশে বাতাসে এখন ভি ডে-র গন্ধ,ভ্যালেন্টাইনস ডে। বাংলা মতে পয়লা ফাল্গুন। কয়েক দশক আগেও কী আর বাঙালির জীবনে বসন্ত আসত না? হ্যাঁ তবে একেবারে বসন্তে নয়, শীত বিদায়ের আগেই মনে লাগত বসন্তের ছোঁয়া। একবার পেছন ফিরে দেখা যাক সে দিকে।

Advertisment

শীত যাই যাই একটা সন্ধে। ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকার পাপড়ি শুকিয়ে আসছে একটু একটু করে। এরই মধ্যে পাড়ায় পাড়ায় প্যান্ডেল, বাড়িতে আলপনা- দোয়াত-কালি- কলম। ফ্ল্যাটের নাতি নাতনিদের নিয়ে সমরেশ বাবুদের জমজমাট বাণী বন্দনা। তবে সত্তর পেরোনো পালবাবু, আলম বাবুদের প্রাক পুজো আয়োজন জুড়েই ফিরে ফিরে আসে স্মৃতি রোমন্থন। সোনালি শৈশব থেকে উঠে আসে এক একটা মাঘের রাত।

তাঁদের সময়ে পুজো ছিল মেলার মত। সপ্তাহ খানেক আগে থেকে শুরু তোড়জোড়। পাড়ার পুজো, সঙ্গে ইস্কুলের। ওই একটা দিনের জন্য বাবা-মা- স্কুলের মাস্টার-দিদিমণিদের কড়া শাসন থেকে ছাড় পাওয়া। পুজোর আগের দিন রাতভর জাগার অনুমতি আদায় ছিল বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ। বাড়ির বড়দের থাকত বাগান পাহারার দায়িত্ব। শেষ রাতে চোখ একটু লেগে এসেছে কী আসেনি, বাগান থেকে হাওয়া খান পাঁচেক ফুলের টব।

আরও পড়ুন, পাল্টানো সময়ের বড়দিন, অ্যামাজনে আসে সান্টার উপহার

মফঃস্বলের স্কুলে ওই একটাই দিন ছিল মেয়েদের স্কুলে ছেলেদের অবাধ যাতায়াত। তার আগে অবশ্য একদিন অনুমতি মিলত। মাস্টারদের বাছাই করে দেওয়া স্কুলের সবচেয়ে ঝকঝকে, সম্ভাবনাময় এবং 'ল্যাজবিহীন' চার থেকে পাঁচজন  ছাত্রের ওপর পড়ত সেই গুরুদায়িত্ব। সরস্বতী পুজোর কার্ড নিয়ে গার্লস স্কুলে আমন্ত্রণ পর্ব।

পুজোর দিনে রাত থাকতে উঠে হলুদ দিয়ে স্নান, বাড়ির অঞ্জলিতে মুঠোয় ভরা পলাশ নিয়ে টানাটানি, ভোগে নুন বেশি, আলপনা ধেবড়ে যাওয়ার পর নতুন শাড়ি কিম্বা পাঞ্জাবি সামলে স্কুল পৌঁছনো। স্কুলে স্কুলে মন্ডপের পাশে সেজে উঠত দেওয়াল ম্যাগাজিন। কোনও কোনও হাতের লেখা ততদিনে চেনা চেনা ঠেকত নাম লেখা না থাকলেও। উড়ো চিঠির দৌলতে হয়তো বা। মিঠে কানাকানির জন্যেও বরাদ্দ বছরের ওই একটাই দিন। চাকরি থেকে সদ্য অবসর নেওয়া আলম আলির মনে পড়ে যায় গার্লস স্কুলের রুনু দিদিমণির মেয়ের মুখটা। আলমের ইলেভেন। রুনু দিদিমণির মেয়ে তখন নাইন। সেই পুজোতেই শেষ দেখা মনিদীপার সঙ্গে। পড়শি ফ্ল্যাটের ছটফটে পেখমকে দেখে মনিদীপাকেই মনে পড়ে যায় তাঁর। গিন্নিকে একবার বলেওছেন সে কথা। পেখমও বড় মিষ্টি মেয়ে। উড়ে উড়েই বেড়ায় ময়ুরের মতো, আর রঙিন মুহূর্তগুলো বন্দি করে রাখে মুঠোফোনে। ভিন রাজ্যে পড়া দাদাটাকে ভিডিও কল করে লাইভ অঞ্জলি দেখার ব্যবস্থা করে দেয় প্রতিবার।

সমরেশ বাবুদের হাতেও পেখমের মতোই স্মার্টফোন। তবে সময়ের নিয়মেই কিছুটা আনস্মার্ট হয়ে পড়া... চোখ থেকে চশমাটা খুলে যায় বারবার, কাছের জিনিস ঝাপসা লাগে, আর দূরেরগুলোই স্পষ্ট।

Advertisment