বাঙালি সংস্কৃতিপ্রেমী, শিক্ষানুরাগী। এনিয়ে বাংলার গর্ব নেহাত কম না। আর, এটা সত্যিই যে বাঙালির মস্তিষ্কচর্চা রীতিমতো তাক লাগানোর মতই। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিদ্বান বাঙালি, সংস্কৃতির জগতে বিখ্যাত বাঙালির সংখ্যা অসংখ্য। আর, তাঁরা নিজেদের জগতে এতটাই সফল যে এ বলে আমায় দেখ, তো ও বলে আমায়। বাঙালির এই শিক্ষানুরাগ তার সরস্বতী বন্দনার মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়ে যায়। প্রতিবছর স্কুল-কলেজ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাঙালি যেভাবে বিদ্যাদেবীর আরাধনায় মেতে ওঠে, তার নজির বাকি ভারতে বেশ কম।
তারপরও ঘরে ঘরে সরস্বতী বন্দনার বাঙালি রীতি কিন্তু, বছরের একটি দিনেই সীমাবদ্ধ থেকেছে আজীবনকাল। সেই ছক ভেঙেছে হাওড়ার দাস পরিবার। আদি বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতে। সেখান থেকে তাঁরা উঠে এসেছিলেন হুগলির বাঁশবেড়িয়ায়। অবশেষে স্থায়ী ঠিকানা হাওড়ার পঞ্চাননতলা। এখানে দাস পরিবারের পূর্বপুরুষ উমেশচন্দ্রের নামে লেন রয়েছে। বঙ্কিম পার্কের পাশে সেই উমেশচন্দ্র লেনেই সরস্বতীর মন্দির। নতুন না, ব্রিটিশ আমলে ১৯২৩ সালের ২৮ জুন এই মন্দির তৈরি হয়েছিল। এবছর এই মন্দিরের শতবর্ষ পূরণ হবে।
মন্দিরের চূড়া বাসন্তী রঙের। চূড়ায় আছে ধাতুর ত্রিশূল ও চক্র। মন্দিরের দরজা লোহার গরাদ লাগানো, কাঠের। দরজার মাথার দেওয়ালে পোড়ামাটির কাজ। প্রতিমা আনা হয়েছিল রাজস্থানে জয়পুর থেকে। উচ্চতা চার ফুট। দেবী দাঁড়িয়ে আছেন হাঁসের ওপর। তাঁর বা হাতে বীণা। ১০৮টি মাটির খুঁড়িতে বড় বাতাসা এবং ফল দিয়ে চলে বছরভর শ্বেতপাথরের সরস্বতীর আরাধনা। এ তো গেল নিত্যদিনের পুজো।
আরও পড়ুন- কোন্নগরের জাগ্রত দেবী শকুনতলা কালী, ভক্তদের আকাঙ্ক্ষা মেটানোয় দেবী অনন্যা
বসন্ত পঞ্চমীতে হয় বিশেষ পুজো। বাসন্তী রঙের শাড়িতে সেদিন সাজানো হয় দেবীকে। তার আগের দিন থেকেই ফুল, মালা, আলোয় সেজে থাকে মন্দির। সময়ের স্রোতে দাস পরিবার ছোট হয়েছে। কিন্তু, যে যেখানেই থাকুন না-কেন, পুজোর দিন সকলেই মিলিত হন বাড়ির পুজোয়। পূর্বপুরুষ উমেশচন্দ্র ছিলেন হাওড়া জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পরবর্তী প্রজন্মের কেউ ডাক্তার তো কেউ ইঞ্জিনিয়ার। বাগদেবীও যেন তাঁর বিদ্যার ভাণ্ডার দাস পরিবারের জন্য উপুড় করে দিয়েছেন।