এই দেবীর কাছে যে যা প্রার্থনা করেন, তা-ই নাকি পূরণ হয়। এখানকার মন্দির ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু কাহিনি। বলা হয়, মন্দিরের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর বয়স প্রায় ২,০০০ বছর। তবে, মন্দিরে পুজো হচ্ছে প্রায় ৩০০ বছর ধরে। অবিভক্ত বাংলার প্রথম এই নবরত্ন মন্দিরে প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে আসেন কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থী। এতটাই জাগ্রত, বর্ধমানের বাঁকা নদীর উত্তর তীরে রাধানগর পল্লিতে অবস্থিত দেবী সর্বমঙ্গলার মন্দির।
এই মন্দিরের দুটো প্রবেশদ্বার রয়েছে। তার মধ্যে যেটি পূর্ব দিকে অবস্থিত, সেটা পুরাতন। মন্দিরের দক্ষিণ দিকে আছে প্রধান প্রবেশদ্বার। প্রধান প্রবেশদ্বারের সামনেই রয়েছে দুটি শিবমন্দির। তার একটির নাম চন্দ্রেশ্বর। অপরটির নাম ইন্দ্রেশ্বর। বর্ধমানের রাজা চিত্রসেন রায়ের দুই রানি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সর্বমঙ্গলা মন্দিরের সামনে আরও তিনটি উত্তরমুখী শিবের মন্দির আছে। যার নাম রামেশ্বর, কমলেশ্বর। যাদের গায়ে রয়েছে টেরাকোটার কাজ। শিবলিঙ্গ শ্বেতপাথরের। মধ্যে রয়েছে মিত্রেশ্বর শিব মন্দির। যার শিবলিঙ্গ কালো পাথরের।
কীভাবে আসবেন? বর্ধমান স্টেশন থেকে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের দূরত্ব মাত্র তিন কিলোমিটার। বর্ধমান স্টেশন থেকে টোটো চেপে চলে আসতে পারেন এই মন্দিরে। ভাড়া ২০ টাকা। বর্ধমানের রাজা কৃত্তিচাঁদ রায় এই মন্দির তৈরি করিয়েছিলেন। এখানে সর্বমঙ্গলা মন্দির ছাড়াও রয়েছে পাঁচটি শিব মন্দির। মন্দিরের বাইরে পূর্ব দিকের দরজার পাশে আছে ধনলক্ষ্মী মন্দির। এছাড়াও মন্দিরের বাইরে বাঁকা নদীর তীরে একটি কামান আছে। আড়াই দশক আগেও দুর্গাষ্টমীতে এই কামান থেকে গোলা ছোড়া হত। যার তোপের আওয়াজে শুরু হত বর্ধমানের বিভিন্ন জায়গায় দুর্গাষ্টমীর সন্ধিপুজো।
সকাল ৬টায় মন্দির খোলা হয়। পুজোয় হয় দুপুর ১২টা পর্যন্ত। ভক্তদের অন্নভোগ খাওয়া হয়ে গেলে দুপুর ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে মন্দির বন্ধ হয়ে যায়। ফের, বিকেল ৪টায় মন্দির খোলা হয়। বন্ধ হয় রাত ৮টার সময়। এখানে মন্দিরে ভোগ খেতে চাইলে সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে মন্দিরের অফিস থেকে ৫০ টাকা দিয়ে কুপন সংগ্রহ করতে হয়। ভোগ বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে, তার মূল্য লাগে ৬০ টাকা। সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে কুপন সংগ্রহ করতে না-পারলে, মন্দিরের প্রধান গেটের সামনে পুজোর দোকান থেকেও অনেক সময় কুপন পাওয়া যায়। ক্রেতাদের কথা মাথায় রেখে ওই বিক্রেতা অল্প কিছু কুপন সংগ্রহ করে রেখে দেন। তাঁর দোকান থেকে পুজোর সামগ্রী কিনলে, ন্যায্য মূল্যে কুপনও পাওয়া যায়।