গড়বেতার সর্বমঙ্গলা মন্দির। যার সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে কিংবদন্তি। কথিত আছে, একবার এক যোগী সাধক এই অঞ্চলে এসেছিলেন। সেই সময় এই জায়গা ছিল শুধুই জঙ্গল। লোকে বলত বগড়ির জঙ্গল। ওই সাধকই মন্ত্রবলে সর্বমঙ্গলা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দিরের মাহাত্ম্যের কথা নাকি পৌঁছয় মগধরাজ বিক্রমাদিত্যের কানে। তিনি তাই শুনেই গড়বেতায় এসেছিলেন।
শবসাধনা করে সন্তুষ্ট করেছিলেন দেবীকে। তার জেরে মহারাজ বিক্রমাদিত্যকে দেবী অলৌলিক ক্ষমতা দান করেন। দেবীর নির্দেশ তাল ও বেতাল মহারাজা বিক্রমাদিত্যের অনুগামী হয়। মহারাজা তাল ও বেতালকে অলৌকিক ক্ষমতা দেখানোর নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশে তাল ও বেতাল মন্দিরকে উত্তরমুখী করে দেন। সেই থেকে গড়বেতার সর্বমঙ্গলা মন্দির উত্তরমুখী।
সর্বমঙ্গলা মন্দিরে গেলে আজও দেখতে পাওয়া যায় পঞ্চমুণ্ডির আসন। কথিত আছে আগে এখানে নাকি নরবলি হত। তা প্রায় ৮০০ বছর আগে। সেই হাঁড়িকাঠ এখনও আছে এই মন্দিরে। তবে, হাঁড়িকাঠ বলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কারণ, এটি মাটির। ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা বা লাল মাটির। একসময় মল্লরাজ দুর্জন মল্ল বলি বন্ধ করে দেন। তার পর থেকে শুরু হয়েছিল বৈষ্ণব মতে পুজো। কিন্তু, কবে থেকে যেন এখানে ছাগ এমনকী মেষ বলিও চালু হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন- কয়েকশো বছরের পুরোনো মন্দির, মনস্কামনা পূরণের জন্য জঙ্গলপথ পেরিয়ে যেখানে পৌঁছন ভক্তরা
এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলায় বর্গি আক্রমণের কাহিনি। বর্গিরা এই মন্দিরে বারেবারে হানা দিয়েছে। নষ্ট করে দিয়েছে মন্দিরের কষ্টিপাথরের মূর্তি। পরবর্তীতে রাজা গজপতি সিংহ মন্দির সংগ্রহ করে নতুন করে বিগ্রহ এখানে দেবী পূজিতা হন দুর্গারূপে। পঞ্চমী তিথিতে হয় দেবীর অঙ্গরাগ। ওই দিন মোম, পারদ, গালা, সিঁদুর দিয়ে দেবীর মুখমণ্ডল তৈরি করা হয়।
দেবীকে এখানে নিত্য ভোগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি, বিশেষ দিনে আছে বিশেষ ভোগের ব্যবস্থা। মকর সংক্রান্তিতে দেওয়া হয় পিঠে। মূল মন্দিরের আছে তিনটি অংশ। স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী এই মন্দির পীর দেউল পর্যায়ের। অর্থাৎ, ওপরদিকটা ধাপে ধাপে হ্রাস পেয়েছে। আর, সেখানে আছে ছাদ বিশিষ্ট মন্দির। এছাড়াও রয়েছে শিবের ১২টি মন্দিরও।