বাংলা বরাবরই শক্তিসাধনার কেন্দ্র। এখানে রয়েছে একের পর এক তীর্থক্ষেত্র। যেখানে বহু দূর থেকে বারেবারে ছুটে এসেছেন ভক্তরা। আর, তেমন ঘটনা সুদূর অতীত থেকেই ঘটেছে। এরাজ্যের এমনই এক তীর্থক্ষেত্র গড়বেতার সর্বমঙ্গলা মন্দির। এক দীর্ঘ ইতিহাস আর ভক্তদের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাক্ষী এই মন্দির। যা দেখতে ওড়িশা বা অন্ধ্রপ্রদেশের মন্দিরগুলোর মতই। সামনেই বিরাট নাটমন্দির। তবে, এর বিশেষত্ব যে এই মন্দির উত্তরমুখী। সাধারণত হিন্দুধর্মে উত্তরমুখী মন্দির হয় না। মন্দির হয় দক্ষিণ অথবা পশ্চিমমুখী। কিন্তু, এই মন্দির ব্যতিক্রম। আর, তারও পিছনেও রয়েছে অলৌকিক কাহিনি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এই মন্দির উজ্জ্বয়িনীর রাজা রূপকথার বিক্রমাদিত্যের সময়কার। সেই সময় এখানে ছিল ঘন জঙ্গল। এক সন্ন্যাসী এসে জায়গাটির প্রতি আকৃষ্ট হন। তিনি মন্ত্রবলে একরাতের মধ্যে এখানে এই মন্দির তৈরি করান। সেকথা জানতে পেরে উজ্জ্বয়িনী থেকে রাজা বিক্রমাদিত্য স্বয়ং এখানে ছুটে এসেছিলেন। তিনি শবদেহের ওপর ওপর বসে তন্ত্রমাধ্যমে দেবীর সাধনা করেছিলেন বলে ভক্তদের বিশ্বাস।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, রাজার সাধনায় তুষ্ট হয়েছিলেন দেবী সর্বমঙ্গলা। তিনি রাজাকে কিছু অলৌকিক শক্তি দান করেছিলেন। তাল-বেতাল যাতে রাজার সেবা করে, সেই শক্তি দিয়েছিলেন। সেই সময় নাকি রাজা বিক্রমাদিত্যই তাল-বেতালের ওপর নিজের প্রভাব পরীক্ষার জন্য মন্দিরকে উত্তরমুখী করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারপরই মন্দিরটি উত্তরমুখী হয়ে যায় বলেই বিশ্বাস ভক্তদের।
আরও পড়ুন- ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ, অজস্র অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী দুবরাজপুরের শ্মশানকালী মন্দির
স্থানীয় বাসিন্দাদের এই কাহিনি নিয়ে সন্দেহ থাকলেও, এই মন্দির তন্ত্রসাধনার কেন্দ্র ছিল, এমনটাই বহু ভক্তেরই ধারণা। এখানে যে বলিপ্রথার প্রচলন ছিল, তার প্রমাণও রয়েছে। মন্দিরের চত্বরেই রয়েছে হাঁড়িকাঠ। শুধু তাই নয়। ভক্তদের দাবি, দেবী সর্বমঙ্গলা সিদ্ধিপ্রদায়িনী। তিনি প্রার্থনা করলে ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ করেন। আর, সেই কারণেই দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে ছুটে আসেন। শুধু এরাজ্যের বিভিন্ন জেলাই নয়। ভিনরাজ্য থেকেও আসেন ভক্তরা। মনস্কামনা পূরণের পর তাঁরা দেবীর প্রণামী ইচ্ছেমত দান করেন। সেই দানের সামগ্রী দিয়েই চলে মন্দিরের কাজকর্ম।