নদিয়ার কল্যাণীর ঘোষপাড়ায় রয়েছে বিখ্যাত সতী মায়ের মন্দির। সতী মা বৈষ্ণবদের কর্তাভজা সম্প্রদায়ের মানবী দেবী বলে পরিচিত। তাঁর এই মন্দিরকে ঘিরে এক বিরাট মেলা বসে। ভক্তদের দাবি, গঙ্গাসাগর মেলা, জয়দেবের মেলার চেয়ে কোনও অংশে কম ভিড় হয় না এই সতী মায়ের মেলায়। শুধু তাই নয়, গঙ্গাসাগর বা জয়দেবের মেলার চেয়ে অনেক বেশিদিন ধরে এই মেলা চলে।
কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রবর্তক হলেন নদিয়ার ঘোষপাড়ার আউলচাঁদ। ভক্তরা তাঁকে গোরাচাঁদ নামে ডাকতেন। এমনকী, শ্রীচৈতন্যের অবতার হিসেবে মানতেন। এই ঘোষপাড়ারই বাসিন্দা ছিলেন রামশরণ পাল। তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম ছিল সরস্বতী। কথিত আছে মরণাপন্ন সরস্বতীর সারা গায়ে পুকুর থেকে মাটি এনে লেপে দিয়েছিলেন আউলচাঁদ। তাতেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন সরস্বতী। পরবর্তীকালে বাড়ির ডালিম গাছের নীচে দীর্ঘ সাধনার পর তিনিই হয়ে ওঠেন সতী মা।
গুরুপুজো হল কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সাধনপথ। আউলচাঁদের পর সতী মা হয়ে ওঠেন কর্তাভজা সম্প্রদায়ের প্রধান। কথিত আছে, তিনি যে ডালিম গাছের নীচে বসে সাধনা করেছিলেন, সেই ডালিম গাছে ঢিল বাঁধলেই ভক্তদের ইচ্ছাপূরণ হয়। ঘোষপাড়ায় তাঁর নামাঙ্কিত মন্দির চত্বর এবং সমাধিক্ষেত্রে ভক্তরা গিয়ে পুজো দেন। পুজোর ডালিও মন্দির চত্বরেই একাধিক ব্যক্তি বিক্রি করেন। ডালিতে ঢিলের জায়গায় দেওয়া থাকে সুতো বাঁধা মাটির ঘোড়া।
আরও পড়ুন- রহস্যময় শিবমন্দির, যেখানে শিবলিঙ্গের স্পর্শে মেলে রোগমুক্তি, মধ্যরাতে ধেয়ে আসে অসংখ্য সাপ
মন্দিরের কাছেই রয়েছে পুকুর। সেই পুকুরে স্নান করে ভক্তদের মন্দিরে পৌঁছে ডালিম গাছে ঢিল বেঁধে দিতে হয়। তাতেই পূরণ হয় মনস্কামনা। আর, মনস্কামনা পূরণ হলে এসে ডালিম গাছ থেকে ঢিল খুলে ফেলতে হয়। এটাই সতী মায়ের মন্দিরের নিয়ম। এখানে নিত্যপুজোর পাশাপাশি, প্রতি শুক্রবার বিশেষ কীর্তনের আসর বসে। ভক্তদের দাবি, হিন্দুদের পাশাপাশি, মুসলিমদের একাংশও কর্তাভজা সম্প্রদায়ের সদস্য। একসময় প্রায় ৬০০ বিঘা জমিতে সতীমায়ের মেলা বসত। বর্তমান ৩০ একর এলাকায় এই মেলা বসে। মেলা পরিচালনা করে কল্যাণী পুরসভা। প্রায় ৬০০টি স্টল বসে এই মেলায়।