পশ্চিমবঙ্গে হিমালয়ের কাছাকাছি পাহাড় ও জঙ্গলঘেরা জেলা আলিপুরদুয়ার। জেলার সদর থেকে ৩৭ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে ভরা পাহাড়ের মাঝখান চিরে বয়ে গিয়েছে নদী। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা পাহাড়ি গ্রাম থেকে বেশ কিছুটা পথ এগোনোর পর রয়েছে এক সতীপীঠ। জায়গাটা সমতল থেকে প্রায় তিন হাজার ফুট উঁচুতে। ভারত-ভুটান সীমান্ত এলাকা। মন্দিরটি ভুটান সীমান্তের ভিতরে।
মন্দির বলতে জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের চূড়ায় তিনটি গুহা। যাদের একত্রে মহাকাল মন্দির বললেও, প্রথম গুহায় রয়েছেন ব্রহ্মা-বিষ্ণু-মহেশ্বর। দ্বিতীয়টিতে শিব। আর, তৃতীয়টিতে মহাকালী। চুনা পাথরের পাহাড়ে প্রাকৃ়তিক সৃষ্ট এই গুহায় দেবীর গর্ভগৃহ। যেখানে হামাগুড়ি দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। বাংলার এই সতীপীঠ অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম জয়ন্তী। আর, তাঁর ভৈরব হলেন ক্রমদীশ্বর। কথিত আছে, এখানে সতীর বামজঙ্ঘা পড়েছিল।
প্রতিবছর শিবরাত্রির সময় আশপাশের অঞ্চল থেকে দুর্গম প্রকৃতি উপেক্ষা করেই বহু মানুষ এখানে ভিড় জমান। সেই সময় ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় মহাকাল মন্দিরে। এখানকার গুহায় প্রবেশের পর দেখা যায়, চুনা জল জমে ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। গুহার নানা দিক থেকে এমন জল বেয়ে পড়তে দেখা যায়। এখানকার কাছাকাছি নদী বলতে জয়ন্তী, তিস্তা ও তোর্সা। জায়গাটির উত্তরে দার্জিলিং, দক্ষিণ গাঙ্গেয় সমভূমি।
আরও পড়ুন- বাংলার এই সতীপীঠে রয়েছে জগন্নাথ মন্দিরও, সাধক বামাক্ষ্যাপাও পেয়েছিলেন দেবীর নির্দেশ
এই স্থান খুবই দুর্গম। পাহাড় আর জঙ্গলের রাস্তা পেরিয়ে ট্রেকিং করে পৌঁছতে হয় মন্দিরে। যানবাহন নেই। পাহাড়ের মধ্যেই জঙ্গল ঘেরা গুহা মন্দির। আশপাশে, বাঘ-সহ নানা জন্তুর দেখা মেলে বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি। সন্ধ্যার পরই আশপাশের অঞ্চল সব নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এখানকার প্রাকৃতিক গুহাতে মহাকালীর বিগ্রহও প্রাকৃতিক ভাবে শিলাখণ্ড দিয়ে তৈরি হয়েছে।
কথিত আছে, এটিই ২১তম সতীপীঠ। এখানকার গুহা যে অতি প্রাচীন, তা একটু ভালো করে দেখলেই বুঝতে পারবেন দর্শনার্থীরা। কেবলমাত্র শিবরাত্রির সময়টুকু ছাড়া এখানে নিরাপত্তার কোনওরকম ব্যবস্থা থাকে না। ফলে, দেবীর দর্শন করতে গেলে দলবেঁধে যাওয়াই ভালো।