বাংলার শক্তিসাধনা বরাবরই উজ্জ্বল। এখানে রয়েছে একের পর এক শক্তিপীঠ। রয়েছে বেশ কয়েকটি সতীপীঠ। এই সব সতীপীঠে সাধনা করে গিয়েছেন বহু জানা-অজানা সাধক। পরবর্তীতে তাঁরা নিজেদের বিখ্যাত সাধক হিসেবে দেশের অধ্যাত্মের আকাশে মেলে ধরেছেন। এমনই এক সতীপীঠ রয়েছে এই বাংলায়, যেখানে আজও মাত্র একমাসের মধ্যেই পূর্ণ হয় ভক্তের মনস্কামনা। ভক্তদের দাবি, বহু দুরারোগ্য ব্যাধিও সেরে যায় এই মন্দিরে এসে প্রার্থনা করলে।
ভারতীয় উপমহাদেশের ৫১তম সতীপীঠের মধ্যে এই সতীপীঠ ৪৫তম পীঠ বলেই পরিচিত। এই সতীপীঠের নাম জুড়ানপুর কালীবাড়ি। কথিত আছে, দেবী সতীর মাথা বা করোটির অংশ এখানে পতিত হয়েছিল। এই কালীপীঠের অপর নাম কালীহট্ট। একসময় ভাগীরথী নদী এই জুড়ানপুর মন্দিরের পাশ দিয়েই বয়ে যেত। এখানে দেবী জয়দুর্গা রূপ অধিষ্ঠিতা। আর সতীপীঠের রক্ষাকর্তা হলেন ক্রোধিত ভৈরব।
এক সুপ্রাচীন বটবৃক্ষের নীচে এখানে দেবী প্রস্তররূপে পূজিতা হন। রামকৃষ্ণ রায়, রামকৃষ্ণ পরমহংস, বামাক্ষ্যাপা, কুলদানন্দ ব্রহ্মচারীর মত বহু বিখ্যাত সাধক এসে এখানে সাধনা করে গিয়েছেন। সিদ্ধিলাভ করেছেন এই মন্দিরে এসে। ভক্তরা এখানে নির্দিষ্ট জায়গায় মনস্কামনা জানিয়ে ঢিল বাঁধেন। মনস্কামনা পূরণ হলে ঢিল খুলে দিয়ে যান।
এখানে রয়েছে পাতাল ঘর। যার সুড়ঙ্গ চলে গিয়েছে গঙ্গা পর্যন্ত। বর্তমানে এই ঘর বন্ধ অবস্থাতেই রয়েছে। এই কালীপীঠে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, রটন্তী কালীপূজা, রথযাত্রা অত্যন্ত সাড়ম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবছর মাঘীপূর্ণিমায় এখানে তিনদিনব্যাপী বিরাট মেলা বসে। সেই সময় হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় জুড়ানপুর কালীমন্দিরে। সাধারণত সকাল ১০টা থেকে দেবীর পূজা আরম্ভ হয়।
আরও পড়ুন- পাণ্ডবজননী কুন্তী করেছিলেন মহাদেবের পুজো, কেউ বলেন এখানকার শিব দেবী তারার ভৈরব
শিয়ালদহ অথবা বহরমপুর থেকে ট্রেনে এসে নামতে হয় দেবগ্রাম স্টেশনে। সেখান থেকে টোটো বা গাড়িতে চেপে আসা যায় জুড়ানপুর কালীবাড়ি। আবার, বাসে চেপে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আসতে হয় দেবগ্রামে। সেখান থেকে টোটো বা গাড়িতে আসা যায় জুড়ানপুর কালীবাড়ি।