সতীপীঠ মানে সেই পীঠস্থান, যা আগাগোড়া সিদ্ধ। সেখানে যা প্রার্থনা করা হয়, প্রায় সবই পূরণ করেন দেবী মহামায়া। বিষ্ণুর চক্রে ৫১ খণ্ডে খণ্ডিত হয়ে দেবী সতীর দেহের অংশ পড়েছিল এই সব পীঠে। দেবীর শরীরের পূণ্যস্পর্শে নিজে থেকেই পীঠস্থানগুলো হয়ে উঠেছে সিদ্ধপীঠ। সেই কথা মাথায় রেখে পীঠগুলোর নামকরণ করা হয়েছে সতীপীঠ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মত এই বাংলাতেও রয়েছে একাধিক সতীপূঠ। যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নানা লৌকিক এবং অলৌকিক কাণ্ডকারখানা।
এরাজ্যে এমনই একটি সতীপীঠ রয়েছে কলকাতার কাছেই হুগলি জেলায়। হুগলির খানাকুল বিধানসভা কেন্দ্র। সেখানে রয়েছে ওই সতীপীঠ। রত্নাকর নদের তীরে বলে, এই পীঠের নাম রত্নাবলী। স্থানীয় বাসিন্দারা একে ডাকেন আনন্দময়ী শক্তিপীঠ নামে। কথিত আছে এখানে দেবী সতীর ডান কাঁধ পড়েছিল। দেবী এখানে হলেন কুমারী। আর, মহাদেবের রূপ ভৈরবকে ডাকা হয় ঘণ্টেশ্বর নামে। কাব্য মীমাংসা গ্রন্থে এই পীঠের কথা বলা আছে। সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশও এই সতীপীঠে তন্ত্রসাধনা করতেন।
আরও পড়ুন- তিরুপতি মন্দিরে সামান্য চুল দান বদলাতে পারে আপনার ভাগ্য, জানেন কীভাবে?
দেবী এখানে মুণ্ডমালিনী, চতুর্ভুজা ও দিগম্বরী। তাঁর দুই বাম হাতের একটিতে রয়েছে খাঁড়া। অন্যটিতে অসুরের মাথা। দুই ডান হাতের একটিতে রয়েছে বর। অন্যটিতে অভয় মুদ্রা। দেবীর মাথায় রয়েছে মুকুট আর গলায় হার। এই পীঠে দেবী এবং ভৈরবের নিত্যসেবার ব্যবস্থা রয়েছে। ফল, মিষ্টির সঙ্গেই নিত্যসেবায় থাকে অন্নভোগও। সন্ধ্যার সময় দেবী ও ভৈরবের আরতি হয়। আশ্বিন ও চৈত্র মাসের নবরাত্রি, দীপান্বিতা অমাবস্যা, কার্তিক অমাবস্যা, মাঘের রটন্তী চতুর্দশী, মহাশিবরাত্রিতে এখানে বিশেষ পুজো হয়। গাজনের মেলাও বসে এখানে।
বেলপাতার বদলে নারকেল দিয়ে ভৈরব ঘণ্টেশ্বরের কাছে মানত করা হয়। অনেকে আসেন টিউমার সারানোর মানত করতে। এই পীঠের কুণ্ডের জল অত্যন্ত পবিত্র বলেই ভক্তদের বিশ্বাস। যাতে অনেক রোগ-ব্যাধি দূর হয় বলেই ভক্তরা বিশ্বাস করেন। দেবীর পাশাপাশি এখানে ভৈরবও অত্যন্ত জাগ্রত। এমনটাই বিশ্বাস ভক্তদের।