Advertisment

হারিয়ে গেছে ফরচুন দাদা, হলুদ বাড়ির সোনালি-সোনালি দিন

দেশে-বিদেশে যে যার মতো প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দূরত্ব বেড়েছে অনেক। তবে সেদিনের সেই মনগুলোকে বেঁধে বেঁধে রেখেছে একটা স্কুলবাড়ি। যে বাড়ির কাছে, ঋণ শেষ হয় না, যে বাড়িটাকে বুকে নিয়ে বড় হয়, বুড়োও হয় মন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

হলুদ বাড়ির চিঠি ছবির একটি দৃশ্য

'দলাদলির দিন, গলাগলির দিন, হঠাৎ অকারণে হেসে ওঠার দিন'গুলো ওঁরা পার করে এসেছেন সাড়ে তিন-চার দশক আগে। কিন্তু দ্রুত বদলাতে থাকা সময়ের অভিমুখ অস্বীকার করে মধ্য পঞ্চাশের একদল প্রৌঢ় ফিরে যেতে চায় স্কুলজীবনের দিনগুলোয়। হলুদ বাড়িটার ভেতরে-বাইরে কাটানো জীবনের সবচেয়ে দামি বছরগুলোয় ওরা ফিরে যাবে, কথা দিয়েছিল শিক্ষকদের। কথা রেখেছে ফ্রেমে ফ্রেমে। সাতের দশকে কলকাতা শহরের নামী স্কুলে শৈশব-কৈশোর দাপিয়ে বেড়ানো ওরা ক'জন স্কুলকেই ফিরিয়ে দিয়েছে হারানোর সময়ের অনেকটা। তৈরি হয়েছে ছবি 'হলুদ বাড়ির চিঠি'। রবিবার স্কুলের মাঠেই দেখানো হবে সেই ছবি।

Advertisment

স্কটিশচার্চ কলেজিয়েট স্কুলের প্রাথমিক বিভাগ। গত শতাব্দীর উত্তাল সাতের দশকে ছোটবেলা কাটিয়েছেন দেবশংকর, অভিজিত, পার্থরা। দেশে-বিদেশে যে যার মতো প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দূরত্ব বেড়েছে অনেক। তবে সেদিনের সেই মনগুলোকে বেঁধে বেঁধে রেখেছে একটা স্কুলবাড়ি। যে বাড়ির কাছে, ঋণ শেষ হয় না, যে বাড়িটাকে বুকে নিয়ে বড় হয়, বুড়োও হয় মন। স্কুল মানে তো শুধুই ইট-কাঠ-পাথরের চারটে দেওয়াল কিমবা ছাদ নয়। স্কুলের সঙ্গে জড়িয়ে স্কুলে যাওয়ার পথ গুলোও। স্কুল ছুটির মাঠগুলোও, অফপিরিয়ডের চেনা মুখগুলোর হৈচৈ, আড্ডা, শেষ বেঞ্চের খুনসুটি, সবটা নিয়েই স্কুল। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে বুকিয়ে যে যার নিজের পেশায় গিয়েও মনের মধ্যে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন স্কটিশের প্রাইমারি সেকশনের দিনগুলো। ভবিষ্যতের যাপন জুড়ে যা সবচাইতে বেশি যত্নে, মায়ায় বেড়ে উঠেছে মনের মধ্যে।

publive-image ছবির ডাবিং এর মুহূর্ত

দীর্ঘ ২৫ বছর সাংবাদিকতার সঙ্গে জুড়ে থাকা দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায় তাঁদের সেই সবুজ সকাল-সোনালি বিকেল নিয়ে তৈরি করেছেন স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি 'হলুদ বাড়ির চিঠি'। অবশ্যই পাশে পেয়েছেন ছেলেবেলার সহপাঠী অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় (ভাবনা)  এবং পার্থ চৌধুরী (চিত্রনাট্য)।  ২৩ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের ছবিতে তুলে ধরেছেন স্কুল জীবনের টুকরো কিছু স্মৃতি, কিছু রাস্তা, কিছু অনাবিল আনন্দ আবার কিছু হারিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা। পরিচালকের দাদা তখন একই স্কুলে ক্লাস এইট। বাস্কেটবল কোর্টের কাছে পাঁচিল ধ্বসে পড়ল ফরচুন দাদার ওপর। আরও এক সহপাঠীর সঙ্গে চিরকালের মতো হারিয়ে গেল ফরচুন দাদা। পরিচালক মশাই তখন ক্লাস টু। তারপর জীবন ছুটেছে নিজের গতিতে। শুধু ফেলে আসা শৈশব আর দাদা বাস্কেটবলের মাঠটা ছেড়ে একটুও এগোয়নি। ছোড়দিকেই বা ভোলে কী করে? রক্তের সম্পর্ক ছিল না। তবে কচি কচি শরীর গুলোয় সেদিন মনগুলো ছিল অনেক বড়। সহপাঠীর ছোড়দি সেদিন অনায়াসে হয়ে যেত গোটা ক্লাসের ছোড়দি।

রবিবার দুপুর ২ টো থেকে পাঁচটার মধ্যে এক কার্নিভ্যালে দেখানো হবে 'হলুদ বাড়ির ছবি'। বিডন স্ট্রিটের স্কুল চত্বরেই হবে কার্নিভ্যাল। নাট্য ব্যক্তিত্ব দেবশঙ্কর হালদার, অভিনেতা শুভাশিস মুখোপাধ্যায়ের মতো প্রাক্তনীরাও থাকবেন কার্নিভ্যালে। থাকবে বাংলার সাংস্কৃতিক জগতের অনেক জ্ঞানী গুণী জন। রবিবার দুপুরবেলা উত্তর কলকাতার হলুদ স্কুল বাড়িটা, জীবনের সবচেয়ে তাজা পাঁচটা-দশটা বছর দাপিয়ে বেড়ানো কচি কচি মুখ গুলো, সেদিনকার সেই চক-ডাস্টার-ব্ল্যাকবোর্ড, কাঁচা-পাকা চুলের আদর্শবান সেই মাস্টার সবাই থাকবে যে যার জায়গায়। সবাই জানবে 'ফুরায় যা তা, ফুরায় শুধু চোখে'।

Advertisment