হিন্দু পঞ্জিকা অনুযায়ী, আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিকে বলে শয়নী একাদশী। যা পদ্ম একাদশী, প্রথমৈকাদশী, মহৈকাদশী, আষাঢ়ী একাদশী, দেবপোধি একাদশী, দেবশয়নী একাদশী, হরিশয়নী একাদশী নামেও পরিচিত। হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে এই তিথিতে বিষ্ণু ক্ষীরসমুদ্রে তাঁর শেষনাগের শয্যায় নিদ্রা যান। সেই কারণে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের কাছে এই তিথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চতুর্মাস্য
চার মাস পরে তিনি কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিতে (প্রবোধিনী একাদশী) নিদ্রা থেকে উত্থিত হন। এই চার মাস সময়কে চতুর্মাস্য বলা হয়। শয়নী একাদশী থেকে যেহেতু এই চতুর্মাস্যের সূচনা হয়, তাই শুরুর দিন ভক্তরা ভগবান বিষ্ণুকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করেন। ভগবান বিষ্ণু ও তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবীর পূজা করেন। উপবাস পালন করেন। সারা রাতব্যাপী কীর্তন করেন। আষাঢ় মাস বর্ষাকাল। তাই বলা যায়, বর্ষাকালে এই চতুর্মাস্য ব্রতের সূচনা হয়।
শয়নী একাদশীর সময়কাল
এবছর শয়নী একাদশীর সময়কাল বৃহস্পতিবার (২৯-০৬-২০২৩) ভোর ৩টে ১৮ মিনিট ৩৮ সেকেন্ড। শেষ হবে। শুক্রবার (৩০-০৬-২০২৩) রাত ২টো ৪২ মিনিট ৫ সেকেন্ডে। অবশ্য পঞ্জিকাভেদে এই সময়সীমার পার্থক্যও আছে।
পারণের সময়
প্রতিটি একাদশী উপবাসের পরদিন পালিত হয়। সেই অনুযায়ী, শয়নী একাদশীর পারণের সময়কাল হল শুক্রবার ভোর ৫টা থেকে ৯টা ৪৬ মিনিট পর্যন্ত।
শয়নী একাদশীর গুরুত্ব
হিন্দুমতে দেবশয়নী একাদশী পালন করলে সমস্ত দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তিলাভ করা যায়। জীবনের সমস্ত বাধা দূর হয়ে যায়। অর্থনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি মেলে। ভগবান বিষ্ণুর পাশাপাশি, এই ব্রতর ক্ষেত্রে অশ্বত্থ গাছের পূজা করলে বিশেষ উপকার মেলে। বেদ এবং পুরাণ অনুযায়ী, একাদশী ব্রত করলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রতিটি ইচ্ছা পূরণ হয়। ভবিষোত্তরপুরাণে যুধিষ্ঠির—শ্রীকৃষ্ণ তথা নারদ—ব্রহ্মা সংবাদ রূপে এই একাদশীর মহাত্ম্যের বর্ণনা আছে।
আরও পড়ুন- কেন এই উৎসবের নাম বকরি বা কোরবানি ঈদ? জানুন এর ইতিহাস ও মাহাত্ম্য
চতুর্মাস্যের বিধি
বৈষ্ণব শাস্ত্রমতে ভগবান বিষ্ণুর এই শয়নকালে বা চার মাসে, সমস্ত ধরনের মাঙ্গলিক কাজ নিষিদ্ধ। এই সময়ে বিবাহ, গৃহপ্রবেশ, নতুন যানবাহন কেনা, বাড়ি কেনাকাটা বা উপনয়নের মত শুভ কাজ করা যায় না। এই চার মাস, ঈশ্বরের উপাসনায় সময় ব্যয় করা বিধেয়।