এরাজ্যে বহু জাগ্রত মন্দির রয়েছে। তার অন্যতম পূর্ব মেদিনীপুরের নাচিন্দা গ্রামের শীতলা মন্দির। যেখানে দেবী শীতলা চণ্ডীকে নিয়ে প্রচলিত আছে বহু কাহিনি। এই মন্দিরের জন্মলগ্ন থেকে যে অলৌকিক কাহিনির শুরু। তারপর দিন গেছে। বেড়েছে কাহিনির সংখ্যাও।
তারমধ্যে প্রথমে আসা যাক মন্দিরের জন্মকাহিনিতে। কথিত আছে আজ যেখানে শীতলা মন্দির, তার কাছাকাছিই থাকতেন এক বৃদ্ধা। তাঁর নাম ছিল ঝাঁপি। ওই বৃদ্ধা সর্বদাই কোনও না-কেন রোগে ভুগতেন। সেই নিয়ে তাঁর খুব দুঃখ ছিল। কথিত আছে, একদিন রাতে ওই বৃদ্ধাকে স্বপ্নে দেখা দেন দেবী শীতলা। দেবী ওই বৃদ্ধাকে স্বপ্নে বলেন, 'তুই চুপচাপ শুয়ে থাকিস না। তোর বাড়ির সামনের পুকুরে স্নান করছি। শরীর খারাপ হলে ভয় পাবি না। আমার পুজো করবি রোজ। স্নান শেষে একট গাছের নীচে ঘট স্থাপন করবি। আমার পুজো করলে রোগগ্রস্ত মানুষ মুক্তি পাবে। সন্তানহীনা সন্তান লাভ করবে। বিদ্যার্থীরা শিক্ষালাভ করবে।'
এই স্বপ্ন দেখার পর বৃদ্ধর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি স্বপ্নে দেখানো দেবীর নির্দেশমতোই পুকুর থেকে স্নান সারেন। তারপর একটি গাছের নীচে জলভর্তি ঘট স্থাপন করেন। সেদিন ছিল অক্ষয় তৃতীয়া। সেই থেকে প্রতিবছর অক্ষয় তৃতীয়ায় বিশেষ পুজো হয় এই মন্দিরে। বছরভর এখানে ভক্তদের ভিড় লেগেই থাকে। মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে। ১৫ দিন ধরে মেলা চলে। ভক্তদের দাবি, দেবী শীতলা নানা রূপে এই মন্দিরের আশপাশে ঘুরে বেড়ান। একবার তিনি সাধারণ বিবাহিত মহিলার রূপ ধরে শাঁখা পরেছিলেন শাঁখারির থেকে।
আরও পড়ুন- এখানে মহাদেবের ওপর বসে থাকেন দুই কালী, জাগ্রত মন্দিরে উপচে পড়ে ভিড়
একদিন রাতে আবার চার জন ক্লান্ত পথিককে মন্দির চত্বরে আশ্রয় দিয়ে রেঁধে খাইয়েছিলেন। ওই চার জন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন ভোরে পূজারির ডাকে তাঁদের ঘুম ভাঙে। পূজারি ওই চার জনকে জানান, স্বপ্নে দেবী শীতলা তাঁকে দেখা দিয়েছিলেন। স্বপ্নে দেবী বলেছেন, রান্না করতে গিয়ে তাঁর হাত পুড়ে গেছে। শাড়িতে কালী লেগেছে। মন্দির খোলার পর পূজারি এবং ওই চার ভক্ত দেখতে পান যে, দেবীর হাতে পোড়া দাগ। আর, শাড়িতে রান্নার কালির দাগ। ওই চার জন স্নান সেরে দেবীর পুজো দিয়ে রওনা দেন।
এই মন্দিরে ভক্তরাই প্রতিদিন দেবীকে নিবেদনের জন্য খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসে। ভক্তদের অধিকাংশেরই দাবি, নাচিন্দার এই দেবী শীতলার মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত। কথিত আছে, এখানে দেবী ভক্তদের মনস্কামনা পূরণ করেন। মানত পূরণের পর এখানকার ভক্তরা মন্দিরে এসে পুজো দিয়ে যান।