মন্দিরময় বাংলা। রাস্তায় যাতায়াতের পথে অনেক মন্দিরই আমাদের চোখে পড়ে। কিন্তু, সেগুলোকে দেখলেও তার বেশিরভাগই আমাদের মন থেকে খানিক বাদেই যেন হারিয়ে যায়। দরকারে মনে থাকে শুধু নিজের এলাকার মন্দিরগুলো। আর, মনে থাকে কিছু বিখ্যাত মন্দিরের কথা। কিন্তু, সেসবের বাইরেও এমন বহু মন্দির আছে, যাদের ঐতিহ্য রীতিমতো মনে রাখার মতই। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত মন্দিরগুলোর খোঁজে বহু দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসে আমার কিংবা আপনার এলাকায়। কিন্তু, সেই এলাকার লোক হয়েও আমরা তার খোঁজ রাখি না।
এমনই এক মন্দির হল উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের শিবশক্তি অন্নপূর্ণা মন্দির। এই মন্দিরটি তালপুকুর এলাকায়। এই এলাকার আগের নাম ছিল চানক। সেখানেই হয়েছিল মন্দিরের প্রতিষ্ঠা। আর, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রানি রাসমনির ছোট মেয়ে জগদম্বা। রানি রাসমনির স্নেহের জামাই ছিলেন মথুরামোহন বিশ্বাস। তাঁর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল রানি রাসমনির সেজ মেয়ে করুণাময়ীর। কিন্তু, তিনি মারা যান। এরপর রানি তাঁর ছোট মেয়ে জগদম্বার সঙ্গে বিয়ে দেন মথুরামোহনের। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব অন্নপূর্ণ মন্দিরেরও উদ্বোধন করেছিলেন।
এই মন্দিরের আদল একেবারে দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দিরের মত। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের স্থপতিই অন্নপূর্ণ মন্দিরের নির্মাণকাজের দায়িত্বে ছিলেন। তবে, দেখতে এক হলে কী হবে, অন্নপূর্ণা মন্দিরের উচ্চতা ভবতারিণী মন্দিরের চেয়ে একটু বেশি। দক্ষিণেশ্বরের মতই প্রাচীর দিয়ে ঘেরা মন্দির চত্বর। মন্দিরের পূর্বদিকে রয়েছে লোহার ফটক।
আরও পড়ুন- ইতিহাস, কল্পকাহিনি আর ধর্মবিশ্বাস এক হয়ে গিয়েছে বাংলার এই মন্দিরে
তার মাথায় রয়েছে সিংহের মূর্তি। সেই লোহার ফটক দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে অন্নপূর্ণা মন্দির। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের কায়দায় তার পাশে রয়েছে আবার নাটমন্দির। পশ্চিম সীমান্তে আবার রয়েছে উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত ছয়টি উঁচু আট চালার শিব মন্দির। যার প্রতিটিতে আছে তিন ফুট লম্বা কালো পাথরের শিবলিঙ্গ। দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরের কায়দাতেই এই ছয়টি শিবমন্দিরের মাঝখানে লোহার ফটক দিয়ে একটি রাস্তা সোজা গঙ্গার ঘাট অবধি নেমে গিয়েছে। গঙ্গার ঘাটের কাছেই ছাদ-সহ চাঁদনি আছে। সেখান থেকে ইটের সিঁড়ি নেমে গিয়েছে গঙ্গা পর্যন্ত। অবিকল দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মতই।