Advertisment

রাস্তার মাঝখানে, ভাঙতে ভয় পেয়েছিলেন স্বয়ং ইন্দিরা গান্ধীও, এতই জাগ্রত লালমন্দির

প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই মন্দির অক্ষত রেখে মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Shovabazar _Lalmandir

কলকাতার গিরীশ এভিনিউ স্ট্রিট দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই ভাবেন, রাস্তার মাঝে কেন দাঁড়িয়ে আছে আস্ত একটা মন্দির? এটাই হল শোভাবাজারের বিখ্যাত লাল মন্দির। অতীতে রাস্তা তৈরির সময় যতবার এই মন্দির ভাঙার চেষ্টা করা হয়েছে, ততবারই যিনি বা যাঁরা এই চেষ্টা করেছেন, তাঁরা মারা গিয়েছেন। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এই মন্দির অক্ষত রেখেই রাস্তা তৈরি করা হবে। বেশ কয়েক শতাব্দী পুরোনো এই মন্দির রাজা নবকৃষ্ণ দেব তৈরি করিয়েছিলেন বলেই মনে করা হয়।

Advertisment

কথিত আছে, কার্তিক নামে এক পূজারি রাজবাড়ির পাশে এসে কালীপুজো করায় নবকৃষ্ণ দেব খুব রেগে গিয়েছিলেন। তিনি প্রহরীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, রাতের অন্ধকারে পূজারি কার্তিক ও দেবীর মূর্তি ছুড়ে ফেলে দিতে হবে। কিন্তু, সেই রাতেই দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন, যাতে পূজারি ও দেবীর মূর্তিকে আবার নিয়ে এসে মন্দির প্রতিষ্ঠা করা হয়। তারপরই প্রতিষ্ঠা করা হয় শোভাবাজার লালমন্দির। কলকাতার চিত্তরঞ্জন এভিনিউয়ের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দিরটি রয়েছে শোভাবাজার মেট্রো স্টেশনের ঠিক সামনে। মন্দিরটির দেওয়ালের রং লাল।

আবার কথিত আছে, ২৫০ বছর আগে এখানে ছিল একটি মাটির ঘর। সেখানেই তন্ত্রসাধনা করতেন অমরনাথ ভট্টাচার্য। তিনি আবার শোভাবাজার রাজবাড়িতে চণ্ডীপাঠ করতেন। তিনি রাজা নবকৃষ্ণ দেবের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র ছিলেন। সেই সুবাদে, রাজবাড়ির উদ্যোগে গড়ে উঠেছিল এই মন্দির। রাজা নবকৃষ্ণ দেব নাকি রাজবাড়ির মেয়েদের শক্তিপূজার জন্য এই মন্দির তৈরি করেছিলেন। কারণ, শোভাবাজার রাজবাড়ির আরাধ্য দেবতা ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই শাক্ত আরাধনার জন্য রাজবাড়ির বাইরে তৈরি হয়েছিল মন্দির। যেখান থেকে সুড়ঙ্গপথে সোজা চলে যাওয়া যেত শোভাবাজার রাজবাড়িতে।

আবার অনেকের মতে, এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কুখ্যাত রঘু ডাকাতের কাহিনিও। রঘু ডাকাত নাকি শোভাবাজার রাজবাড়ির সমস্ত সম্পত্তি লুঠের সঙ্গে যোগমায়ার মূর্তিও লুঠ করেছিল। তারপর সেই মূর্তি পুকুরে ফেলে দিয়েছিল। রাজা নবকৃষ্ণ দেব, স্বপ্নাদেশ পেয়ে পুকুর থেকে মূর্তি তুলে এনে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

আরও পড়ুন- বামাক্ষ্যাপার গুরুদেবের প্রতিষ্ঠিত মন্দির, যেখানে ৪০ ফুট খুঁড়েও মেলেনি শিবলিঙ্গের তল

আবার শোনা যায়, ব্রিটিশ শাসকরা রাস্তা তৈরির সময় এই মন্দির ভাঙার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু, মন্দির ভাঙতে গিয়ে অনেক মজদুর মুখে রক্ত উঠে মারা যান। তারপরও নানা সময় রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য এই মন্দির ভাঙার প্রস্তাব ওঠে। কিন্তু, প্রতিবারই সেই প্রস্তাব নানা কারণে বাতিল হয়ে যায়। এমনকী, মেট্রো রেলের পথ তৈরির সময়ও এই মন্দিরের গায়ে আঁচড় পড়েনি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই মন্দির অক্ষত রেখে মেট্রোর সুড়ঙ্গ খোঁড়ার জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিলেন।

নিত্যপুজোর পাশাপাশি, প্রতি বৃহস্পতি এবং শনিবার এখানে বিশেষ পুজোর আয়োজন করা হয়। মন্দিরের মধ্যে যোগমায়ার পাশাপাশি অন্নপূর্ণা, শিব, গোপালের পুজো করা হয়। মন্দিরটি ট্রাস্টিদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

Durgapuja pujo Temple
Advertisment