পঞ্চ উপাসক হিন্দুরা বরাবরই সূর্য উপাসনা করেন। সূর্য প্রণাম, সূর্য ব্রত এই পুজোর অন্যতম অঙ্গ। ভারতে সূর্যপুজো বিস্তারে সহায়তা করেছিলেন কৃষ্ণপুত্র শাম্ব। বাংলায় সেন বংশের আমলে সূর্যপুজোর চল বেড়েছিল। এর মধ্যে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের সোনাতপল গ্রামের সূর্য মন্দির বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আগে ওই মন্দিরের পাশ দিয়ে বয়ে যেত দ্বারকেশ্বর নন্দী। শুধু তাই নয়, আগে ওই অঞ্চলকে বলা হত হামিরডাঙা। কথিত আছে এগারো শতকে সোনাতপলের সূর্যমন্দির তৈরি হয়েছিল। টেরাকোটার ওই মন্দিরের স্থাপত্য এবং ভাস্কর্য অতুলনীয়।
রাজাদের এত পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার পরও কিন্তু, সূর্য বা অন্য কোনও দেবতা নয়। পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি বিস্তারলাভ করেছে কালী আরাধনা। যে দেবীকে আপন করে নিয়েছে আপামর বাঙালি। যে দেবী শুধু রাজগৃহের অন্তঃপুরে থাকেননি। হয়ে উঠেছেন বাঙালির শক্তি আরাধনার প্রকৃত রূপ। যার জেরে রাজ্যের আনাচ-কানাচে তৈরি হয়েছে বহু শক্তিপীঠ। দেবীর অলৌকিক ক্ষমতায় চমকে উঠেছে আট থেকে আশি।
এমনই এক চমৎকারী শক্তিপীঠ রয়েছে মুর্শিদাবাদের প্রাচীন গ্রাম গোকর্ণে। যে গ্রাম প্রাচীনকাল থেকেই শক্তি আরাধনার জন্য প্রসিদ্ধ। আর, সেই প্রসিদ্ধির কেন্দ্রবিন্দু গ্রামের শ্যামরায় কালী মন্দির। কথিত আছে, দেবীকে শ্মশান থেকে তুলে বাড়িতে স্থাপন করেছিলেন এই গ্রামেরই বাসিন্দা শ্যামাচরণ রায়। আর, তাতেই বিগ্রহের নামকরণ হয়ে যায় শ্যাম রায় কালী। অত্যন্ত জাগ্রত এই কালী। দেবীর কাছে মনস্কামনা নিয়ে গেলে, তা পূরণ হয় বলেই বিশ্বাস করেন ভক্তরা। শুধু তাই নয়, আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা করেন এই দেবী। আর, সেই কারণেই স্বপ্নাদেশ পেয়ে ওই বিগ্রহ বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন শ্যামাচরণ।
আরও পড়ুন- বাংলার প্রাচীনতম শনি মন্দির, যেখানে ভক্তদের ওপর অসীম কৃপা বর্ষণ করেন গ্রহরাজ
এই মন্দিরে দেবীর নিত্যপুজোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতি শনি ও মঙ্গলবারে মন্দিরে ভিড় উপচে পড়ে। দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এসে দেবীর কাছে বিশেষ প্রার্থনা করেন। মনস্কামনা পূরণ হলে, মানত মানত জন্য ফের এই মন্দিরে আসেন। মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর-কান্দি রাজ্য সড়কের পাশে এই মন্দির। যাতায়াতের জন্য বাস রয়েছে। গোকর্ণ হাসপাতাল অথবা বায়েনপাড়া স্টপেজে বাস থেকে নেমে মন্দিরে যাওয়ার জন্য টোটো পাওয়া যায়। টোটোকে বললেই হবে শ্যামরায় কালীবাড়ি যাব।