হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, মহাদেব আদিপুরুষ। তিনিই সবের মূল কারণ। সেই ভোলানাথ শিবের মন্দির রয়েছে কলেশ্বর ধামে। বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে প্রায় ১২ মাইল পূর্বদিকে কলেশ্বর গ্রাম। সেখানেই রয়েছে এই কলেশ্বর ধাম বা কলেশ্বর মন্দির। যার অধিষ্ঠাতা দেবতা শিবশংকর। কলেশনাথ নামেও যিনি পরিচিত। বছরভর এই মন্দিরে পুণ্যার্থীদের যাতায়াত লেগেই থাকে। তার প্রধান কারণ, এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত।
ভক্তদের বিশ্বাস প্রাচীনকালে বহু মুনি-ঋষির সাধনক্ষেত্র ছিল কলেশ্বর ধাম। এমনকী, পর্বত নামে এক ঋষি এখানে দেবী পার্বতীর তপস্যা করেছিলেন। সেই সিদ্ধপুরুষের নাম অনুযায়ী এই জায়গার নাম এক সময়ে ছিল পার্বতীপুর। চন্দ্রচূড় নামে এক গ্রন্থে কলেশ্বরকে মৎস্য দেশের মায়াতীর্থ বলা হয়েছে। পরবর্তীতে এই মন্দিরেই দেবীর সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেন ধানঘড়া গ্রামের কলশ ঘোষ। তারপর থেকে পার্বতীপুর পরিচিত হয় কলেশ্বর নামে।
কথিত আছে, সপ্তদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে স্থানীয় নরপতি রামজীবন রায় মন্দিরটির সংস্কার করান। তার পর মন্দির নির্মাণে এগিয়ে আসেন মুর্শিদাবাদ জেলার রাজা ধীরেন্দ্রনারায়ণ রায়। মন্দির নির্মাণে লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। অবশেষে ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ২৮ মাঘ এই মন্দির পুনরায় নির্মিত হয়। যে মন্দিরের উচ্চতা হয় ১১০ ফুট। এই মন্দিরের মূল গর্ভগৃহে রয়েছে শিবের কষ্টিপাথরের লিঙ্গ। আর রাজা ধীরেন্দ্রনাথ রায় প্রায় দুই মণ ওজনের পার্বতী দেবীর অষ্টধাতুর মূর্তিটি দান করেছিলেন।
আরও পড়ুন- বাঁকুড়ার ঝগড়াইচণ্ডী, রোগ থেকে কামনাপূর্তি, কলহ থেকে মামলা মেটাতে ভক্তদের ভরসা
বর্তমানে এই মন্দিরে নিত্যপুজো তো হয়ই। পাশাপাশি, বিভিন্ন তিথিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের বন্দোবস্ত করা হয়। কথিত আছে এই মন্দিরে এসে শিবের কাছে প্রার্থনা জানালে তা অবশ্যই পূরণ হয়। সেই কারণে, প্রার্থনা জানাতে দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা এই মন্দিরে ছুটে আসেন। ফাল্গুন মাসে শিবচতুর্দশীকে কেন্দ্র করে মন্দির প্রাঙ্গণে সাত দিন ধরে মেলার আয়োজন হয়। এছাড়াও এখানে দোল, নন্দোৎসব, ভাজু, ভাদু, শারদোৎসব-সহ বিভিন্ন উৎসব পালিত হয়। এই সময় হাজার হাজার দর্শনার্থীর জন্য থাকে বিশেষ ভোগের আয়োজন।